কলার খোসা খাওয়ার উপকারিতা বিস্তারিত ।

কলা আমাদের কাছে একটি পরিচিত এবং পুষ্টিকর ফল। এটি সুস্বাদু এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর। তবে, অনেক মানুষ কলার খোসা সাধারণত ফেলে দেয়, যা আসলে এক ধরনের অপচয় হতে পারে। 

কলার খোসা খাওয়ার উপকারিতা বিস্তারিত ।কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চাকলার খোসার ব্যবহারকলার খোসার অপকারিতাকলার খোসা মুখে মাখলে কি হয়চুলের যত্নে কলার খোসাকলার খোসা দিয়ে সার তৈরিকলা দিয়ে মুখ ফর্সাকলার উপকারিতা

আপনি জানেন কি? কলার খোসাতেও অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে যা আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে।

এই লেখায়, আমরা আলোচনা করবো কলার খোসা খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে এবং কেন আমাদের এটি খাবারের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।

কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক

কলার খোসাতে উপস্থিত ফাইবার এবং পটাসিয়াম কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এটি বিশেষ করে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য উপকারী।

কলার খোসায় বিদ্যমান ফাইবার কোলেস্টেরল শোষণের প্রক্রিয়া ধীর করে দেয় এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বের করে দেয়।
এতে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

হজমের সমস্যা সমাধান

কলার খোসায় উচ্চ পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা হজমে সহায়ক। এটি আমাদের পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সক্ষম।

ফাইবার পাচনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং অন্ত্রের সঠিক কার্যক্রম নিশ্চিত করে।
এটি খাদ্য চলাচল সঠিক রাখে এবং বিপাক প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়।

আনন্দদায়ক মেজাজ এবং মানসিক চাপ কমানোর জন্য সহায়ক

কলার খোসাতে উপস্থিত ট্রিপটোফান একটি এমিনো অ্যাসিড যা শরীরে সেরোটোনিন উৎপন্ন করতে সহায়ক। সেরোটোনিন হল একটি রাসায়নিক যা মস্তিষ্কে সুখ ও আনন্দ অনুভূতি সৃষ্টি করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

ট্রিপটোফান এবং সেরোটোনিনের প্রভাব মানুষের মেজাজ উন্নত করতে এবং উদ্বেগ বা বিষণ্নতা কমাতে সাহায্য করে।
এটি নিদ্রাহীনতা দূর করতে সহায়তা করতে পারে, কারণ এটি ঘুমের মানও উন্নত করতে পারে।

ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারী

কলার খোসাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন ভিটামিন রয়েছে যা ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারী। এটি ত্বকের কোষ পুনর্গঠন করতে সহায়ক এবং চুলের বৃদ্ধির জন্যও উপকারী হতে পারে।
  • কলার খোসাতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের বলিরেখা এবং সূর্যের ক্ষতির বিরুদ্ধে কাজ করতে সাহায্য করে।
  • খোসার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ ত্বকের স্নিগ্ধতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত তৈলাক্ততা বা ব্রণের সমস্যা কমাতে পারে।
  • এটি চুলের স্বাস্থ্য বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, কারণ এতে উপস্থিত পটাসিয়াম চুলের গঠন শক্তিশালী করে এবং ব্রণের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য

কলার খোসায় উপস্থিত ফাইবার এবং পলিফেনলস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধকে কমাতে পারে।

  • এটি শর্করা হজমের প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং রক্তে শর্করা সঠিক পরিমাণে পৌঁছানোর জন্য সহায়ক।
  • খোসায় থাকা পটাসিয়াম শরীরের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি উপকারী বৈশিষ্ট্য।

দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে

কলার খোসাতে ক্যারোটিনয়েডস এবং লিউটিন রয়েছে, যা আমাদের চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই উপাদানগুলি চোখের পীড়া এবং বয়সজনিত দৃষ্টির সমস্যা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • লিউটিন এবং ক্যারোটিনয়েডস চোখের মাকুলা (চোখের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ) সুরক্ষিত রাখে, যা দৃষ্টিশক্তি সংরক্ষণে সাহায্য করে।
  • এটি চোখের বিভিন্ন রোগ, যেমন চোখের চাপ, চোখের অন্ধত্বের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।

ওজন কমাতে সহায়ক

কলার খোসাতে কম ক্যালোরি এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা শরীরের বিপাক কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে এবং এটি ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে।

ফাইবার শরীরে দীর্ঘক্ষণ তৃপ্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে, যার ফলে অতিরিক্ত খাওয়া এড়ানো সম্ভব হয়।
খোসার ফাইবার হজমকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে সাহায্য করে এবং শরীরের প্রাকৃতিক ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়।

পোকামাকড় দূর করার উপকারিতা

কলার খোসা কিছু প্রাকৃতিক পোকামাকড় দূরকারী হিসেবে কাজ করে। এটি মাটির মধ্যে পোকামাকড়দের জন্য একটি প্রাকৃতিক রিপেলেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এটি শরীরের জন্যও কার্যকর হতে পারে।
  • কলার খোসা পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিকভাবে কাজ করতে পারে, যা কিছু পরিস্থিতিতে সহায়ক হতে পারে।
  • এছাড়াও, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি পোকামাকড়কে দূরে রাখতে পারে, যেমন মশা, যা গ্রীষ্মকালে আমাদের দেহে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

যথাযথ শারীরিক শক্তি প্রদান

কলার খোসায় উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম আমাদের শরীরের শক্তি উৎপাদনে সহায়ক। এই উপাদানগুলি শরীরের পেশী এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম ভালো রাখে এবং শরীরের শক্তির স্তর বজায় রাখে।
  • খোসার পটাসিয়াম শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা শক্তি বজায় রাখতে সহায়ক।
  • ম্যাগনেসিয়াম পেশী শিথিল করতে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কলার খোসা এমন একটি উপাদান, যেটি আমরা সাধারণত ফেলে দিয়ে থাকি, কিন্তু এর মধ্যে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এটি কোলেস্টেরল কমানো, হজমের সমস্যা সমাধান, মানসিক চাপ কমানো, ত্বক ও চুলের যত্ন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে। এছাড়া, এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাসিয়াম, ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

তাহলে, পরবর্তী বার যখন আপনি কলা খাবেন, নিশ্চিত হোন যে আপনি এর খোসাও অপচয় না করে গ্রহণ করছেন। এটি আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে এবং আপনি এটি বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করতে পারেন, যেমন কলার খোসা দিয়ে স্মুদি বা চা তৈরি করা, অথবা সরাসরি খাওয়া।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url