পাহাড়ের গুহায় আঁটকে পড়া তিন যুবকের করুন কাহিনী ।

একদা তিন যুবক একটি ভ্রমণে বের হয়েছিল। চলতে চলতে তারা পাহাড়ি পথে চলতে থাকে এবং সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে তারা রাত কাটানোর জন্য আশ্রয় খুঁজতে শুরু করে। অবশেষে তারা একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়। কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ পাহাড়ের উপর থেকে একটি বিশাল পাথর গড়িয়ে এসে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তারা গভীরভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, কারণ বাইরে বের হবার অন্য কোনো উপায় ছিল না।

আরো বিস্তারিত জানতে ভিডিওতে ক্লিক করুন

তারা বুঝতে পারে যে তাদের নিজের শক্তিতে এত বড় পাথর সরানো অসম্ভব। তখন তারা আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা নিজেদের জীবনে এমন কিছু সৎকর্মের কথা স্মরণ করে যা তারা নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেছিল এবং আল্লাহর কাছে সেই কাজগুলোর উছিলায় মুক্তি প্রার্থনা করতে শুরু করে।

প্রথম যুবকের গল্প:

প্রথম যুবক বলল, “হে আল্লাহ! একদিন আমি সারাদিন কাজ করে রাতে বাড়ি ফিরেছিলাম। আমার বৃদ্ধ মা-বাবার জন্য দুধ নিয়ে এসেছিলাম। যখন আমি বাড়ি পৌঁছালাম, তারা ঘুমিয়ে ছিলেন। আমি তাদের না জাগিয়ে দুধ হাতে নিয়ে তাদের ঘুম থেকে ওঠার অপেক্ষায় সারা রাত দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি তাদের আগে কিছু খাইনি, তাদের সম্মানের জন্য আমি অপেক্ষা করেছিলাম। পরে তারা ঘুম থেকে জেগে দুধ পান করলেন। হে আল্লাহ! যদি এই কাজটি তোমার সন্তুষ্টির জন্য হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের এই বিপদ থেকে মুক্তি দাও।” তখন গুহার মুখের পাথর সামান্য সরে গেল, তবে তারা তখনও বের হতে পারল না।

দ্বিতীয় যুবকের গল্প:

দ্বিতীয় যুবক বলল, “হে আল্লাহ! আমি এক মহিলাকে ভালোবাসতাম এবং তাকে পাপের পথে ডেকেছিলাম। সে আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং আল্লাহর ভয় প্রকাশ করেছিল। তারপর একদিন তার চরম প্রয়োজনে সে আমার কাছে এসে সাহায্য চাইলে আমি সুযোগ নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আল্লাহভীতি ও সততার কথা মনে পড়ায় আমি আমার নিজস্ব লোভকে সংযত করলাম এবং তাকে বিনা শর্তে সাহায্য করলাম। হে আল্লাহ! যদি এই কাজটি তোমার সন্তুষ্টির জন্য হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের এই বিপদ থেকে মুক্তি দাও।” তখন পাথর আরও কিছুটা সরে গেল, কিন্তু তবুও তারা বের হতে পারল না।

তৃতীয় যুবকের গল্প:

তৃতীয় যুবক বলল, “হে আল্লাহ! আমি একবার এক শ্রমিককে কাজের জন্য নিয়োগ করেছিলাম, এবং কাজের শেষে তার পারিশ্রমিক দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। সে চলে যাওয়ার পর আমি সেই টাকাগুলো নিয়ে একটি ব্যবসা শুরু করি। অনেক বছর পর সে আমার কাছে এসে তার পারিশ্রমিক দাবি করল। তখন আমি তাকে বললাম যে তার পারিশ্রমিকের টাকায় ব্যবসা করে আমি একটি বড় সম্পত্তি তৈরি করেছি। আমি তাকে পুরো সম্পত্তি দিয়ে দিলাম। সে তা গ্রহণ করে সন্তুষ্টি সহকারে চলে গেল। হে আল্লাহ! যদি এই কাজটি তোমার সন্তুষ্টির জন্য হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের মুক্তি দাও।”

এই প্রার্থনার পর পাথর পুরোপুরি সরে গেল, এবং তিন যুবক নিরাপদে গুহা থেকে বের হয়ে মুক্তি পেল।

শিক্ষা:

এই কাহিনী থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে, সৎকর্ম ও আল্লাহভীতি আমাদের জীবনে এমন মুহূর্তে মুক্তি ও সাহায্য এনে দিতে পারে যখন আমরা কোনো উপায় খুঁজে পাই না। আল্লাহ তার বান্দাদের কাজ ও ইখলাস (বিশুদ্ধ নিয়ত) গ্রহণ করেন এবং বিপদ থেকে মুক্তি দেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url