ইব্রাহিম আঃ এর জীবনী | ইব্রাহিম আঃ কত বছর বয়সে সন্তান লাভ করেন।

ইব্রাহিম আ. এর (আলাইহিস সালাম) জীবন কাহিনী ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। তিনি ছিলেন আল্লাহর একনিষ্ঠ প্রেরিত পুরুষ, যাকে মুসলমানরা আল্লাহর বন্ধু (খলীলুল্লাহ) হিসেবে জানেন। তাঁর জীবনীতে রয়েছে ত্যাগ, ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থা ও ভালোবাসার শিক্ষা।

হযরত ইব্রাহীম আঃ, সারা আঃ এবং অত্যাচারি বাদশার অলকিক ঘটনা

আরো বিস্তারিত জানতে ভিডিওতে ক্লিক করুন

জন্ম ও শৈশব

ইব্রাহিম আ. এর জন্ম ইরাকের বাবেল অঞ্চলে। তার পিতা আযর ছিলেন মূর্তি নির্মাতা ও মূর্তিপূজারী। ইব্রাহিম আ. ছোটবেলা থেকেই এ মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং সত্যের অনুসন্ধানে মনোনিবেশ করেন।

মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে সংগ্রাম

তাঁর সময়ে মূর্তিপূজা অত্যন্ত প্রচলিত ছিল। ইব্রাহিম আ. আল্লাহর নির্দেশে এ মূর্তিগুলোর বিরোধিতা করেন। একসময় তিনি মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলেন এবং এর জন্য শাস্তি স্বরূপ তাঁকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয়। আল্লাহর ইচ্ছায় এই আগুন তাঁর জন্য শীতল হয়ে যায় এবং তিনি নিরাপদে বেরিয়ে আসেন।

আল্লাহর একত্ববাদ প্রচার

ইব্রাহিম আ. বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আল্লাহর একত্ববাদের বাণী প্রচার করেন। তিনি তাঁর জাতির মানুষদেরকে আল্লাহর পথে আহ্বান করেন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তাঁর কথা মানতে অস্বীকৃতি জানায়।

ইসমাইল আ. এর কোরবানি

ইব্রাহিম আ. এর জীবনের অন্যতম বড় পরীক্ষা ছিল তাঁর পুত্র ইসমাইল আ. কে আল্লাহর পথে কোরবানি করার ঘটনা। আল্লাহর আদেশে তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে কোরবানি করার প্রস্তুতি নেন, কিন্তু আল্লাহ নিজেই তাঁকে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে ঘোষণা দেন এবং কোরবানির জন্য ইসমাইলের পরিবর্তে একটি মেষ পাঠান।

কাবা নির্মাণ

ইব্রাহিম আ. ও তাঁর পুত্র ইসমাইল আ. আল্লাহর নির্দেশে কাবা ঘর নির্মাণ করেন। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক, যা মুসলমানরা আজও সম্মান করে থাকে এবং হজের সময় তাওয়াফ করে।

মৃত্যু ও অবদান

ইব্রাহিম আ. বৃদ্ধ বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাঁর জীবন আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, ধৈর্য ও আত্মত্যাগের উদাহরণ হয়ে আছে।

ইব্রাহিম আ. এর জীবনী থেকে মুসলমানরা জীবনের বিভিন্ন দিকের শিক্ষা গ্রহণ করে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা রাখার অনুপ্রেরণা পায়।

ইব্রাহিম আ. আল্লাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও নবী ছিলেন, এবং তাঁর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল তাঁর দুই পুত্র সন্তানের জন্ম ও তাদের সাথে আল্লাহর নির্দেশে তাঁর সম্পর্কের পরীক্ষা।

ইসমাইল আ. এর জন্ম (প্রথম সন্তান)

ইব্রাহিম আ. প্রায় ৮৬ বছর বয়সে তাঁর প্রথম পুত্র ইসমাইল আ. এর জন্ম লাভ করেন। ইসমাইল আ. এর মা হাজেরা (হাগর) ছিলেন ইব্রাহিম আ. এর দ্বিতীয় স্ত্রী। ইব্রাহিম আ. বহু বছর ধরে একটি সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এবং বৃদ্ধ বয়সে তাঁর প্রার্থনা কবুল হয়।

ইসমাইল আ. এর ঘটনাবলী

  • মক্কায় আগমনঃ আল্লাহর নির্দেশে ইব্রাহিম আ. তাঁর স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাইল আ. কে মক্কার মরুভূমিতে রেখে যান। এখানে তিনি তাঁদেরকে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল করে রেখে চলে যান।
  • জমজম কূপঃ হাজেরা যখন পানির অভাবে দিশেহারা হয়ে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে ছোটাছুটি করছিলেন, আল্লাহর কৃপায় জমজম কূপের উৎস হয়, যা আজও মুসলিমদের জন্য একটি পবিত্র স্থান।
  • কোরবানির পরীক্ষাঃ যখন ইসমাইল আ. তরুণ হন, তখন আল্লাহ ইব্রাহিম আ. কে স্বপ্নে দেখান যে তাঁকে তাঁর পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করতে হবে। ইসমাইল আ. আল্লাহর নির্দেশ মেনে নিজেকে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেন, কিন্তু আল্লাহ ইসমাইলের পরিবর্তে কোরবানির জন্য একটি পশু (দুম্বা) প্রেরণ করেন।

ইসহাক আ. এর জন্ম (দ্বিতীয় সন্তান)

প্রায় ৯৯ বছর বয়সে ইব্রাহিম আ. তাঁর দ্বিতীয় পুত্র ইসহাক আ. এর জন্ম লাভ করেন। ইসহাক আ. এর মা ছিলেন ইব্রাহিম আ. এর প্রথম স্ত্রী সারা। ইসহাক আ. এর জন্ম ইব্রাহিম ও সারা উভয়ের জন্যই এক বিশেষ আশীর্বাদ হিসেবে আসে, কারণ তাঁরা দুজনেই বৃদ্ধ ছিলেন এবং সাধারণত এমন বয়সে সন্তান লাভের আশা ছিল না।

ইসহাক আ. এর ঘটনাবলী

ইসহাক আ. জন্মগ্রহণ করার পর তাঁকে উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং পরবর্তীতে ইসহাক আ. এর বংশে অনেক নবী আসেন। ইসহাক আ. এর বংশধরদের মধ্যেই আসে নবী ইয়াকুব (আ.), ইউসুফ (আ.) এবং অনেকেই, যাঁরা পরবর্তীতে বনী ইসরাইলের প্রেরিত পুরুষ হিসেবে পরিচিত হন।

ইব্রাহিম আ. এর সন্তানদের বংশধর

ইব্রাহিম আ. এর এই দুই পুত্রের মাধ্যমেই মুসলিম জাতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা তৈরি হয়:
  • ইসমাইল আ. এর বংশঃ ইসমাইল আ. এর বংশধরদের মধ্যে আরব জাতির উদ্ভব ঘটে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন ইসমাইল আ. এর বংশধর।
  • ইসহাক আ. এর বংশঃ ইসহাক আ. এর বংশধরদের মধ্য থেকেই বনী ইসরাইল জাতির জন্ম হয়, এবং তাঁদের মধ্য থেকে বিভিন্ন নবী প্রেরিত হন, যেমন ইয়াকুব আ., ইউসুফ আ., মূসা আ., দাউদ আ., সোলায়মান আ. এবং ঈসা আ. (যাকে খ্রিস্টানরা যিশু নামে জানেন)।
ইব্রাহিম আ. এর এই দুই পুত্রের জীবনীতে রয়েছে আল্লাহর প্রতি তাঁদের আনুগত্য, পিতার প্রতি তাঁদের ভালবাসা এবং ঈমানের মজবুত ভিত্তি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url