কবরের আজাব সম্পর্কে ঘটনা | কবরের আজাব কেমন হবে ?

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা অনুসারে কবরের আজাব সত্য। বিভিন্ন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, নেকার মুমিনগণ যেমন কবরের মধ্যে কেয়ামত পর্যন্ত আরাম-আয়েশে থাকবে, তেমনি কাফের ও বধকার কবরে আযাব ভোগ করতে থাকবে। একবার হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা এর নিকট এক ইহুদি মহিলা আসলো। মহিলাটি তার সামনে কবর আজাবের আলোচনা করে বলল।
কবরের আজাব সম্পর্কে ঘটনাকবরের আজাব কেমন হবেকবরের আজাব সম্পর্কে আয়াতকবর সম্পর্কে হাদিস আরবিকবরের আযাব সম্পর্কে হাদিসকবরের আজাব আলকাউসারভয়ঙ্কর কবরের আজাববেনামাজির কবরের আজাবকবরের আজাব সম্পর্কে আয়াতবেনামাজির কবরের আজাবকবরের আজাব সম্পর্কে হাদিসকবরের আজাব কেমন হবেভয়ঙ্কর কবরের আজাবকবরের আজাব আলকাউসারকবরের আযাব আত তাহরীকনারীদের কবরের আজাব

আল্লাহ তোমাকে কবরের আজাব থেকে হেফাজত করুন। অতঃপর হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা এ সম্পর্কে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, হ্যাঁ কবরের আজাব সত্য।

অতঃপর হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা বলেন, যখনই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ পড়েছেন, তখনই কবরের আজাব থেকে মুক্তির দোয়া করেছেন। বুখারী, মুসলিম।

হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা যখন কোন কবরের নিকট দাঁড়াতেন তখন এত অধিক পরিমাণ কাঁদতেন যে, চোখের পানিতে তার দাড়ি ভিজে যেত। এ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনি জান্নাত জাহান্নামের আলোচনায় এত অধিক পরিমাণ কাদেন না, কবর দেখে আপনার এত বেশি কান্নাকাটি করার কারণ কি?

হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা উত্তর দিলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই কবর আখেরাতের ঘাটিগুলো থেকে প্রথম ঘাটি। যদি এই ঘাটি থেকে নাজাত পাও, তাহলে অবশিষ্ট ঘাটি গুলোর পার হওয়া আরো বেশি সহজ। আর যদি এই ঘাটি থেকে বাঁচতে না পারো, তাহলে অবশিষ্ট ঘাঁটিগুলো অতিক্রম করা আরো কঠিন। তিরমিজি শরিফ।

কবরে আজাব দানকারী আজগর

হযরত আবু সাঈদ কুদর ী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা বর্ণনা করেন: নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, অবশ্যই কবরের মধ্যে কাফেরের জন্য ৯৯ টি অজগর নির্ধারিত করে দেওয়া হয়। অজগর গুলো কেয়ামত পর্যন্ত তাকে দংশন করতে থাকে। এ অজগর এ তো বিষাক্ত যে, যদি একটি অজগর পৃথিবীতে সাহস ফেলে তাহলে জমিনে শাকসবজি উৎপন্ন হবে না।

অর্থাৎ সাপ গুলোর বিক্রিয়া এত বেশি মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক হবে যে, সেখান থেকে একটি অজগরও যদি পৃথিবীতে একবার শ্বাস ফেলে, তাহলে তার বিস্ক্রিয়ায় জমিনের একটি ঘাস উৎপন্ন করার যোগ্যতা থাকবে না। বর্তমান যুগের আবিষ্কৃত এটম বোমা ইত্যাদি দেখার পর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর বাণী বোঝার ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না। দাঁরামী।
আজাবের কারণে কবর বাসির চিৎকার এবং লোহার গুজ্জো দিয়ে প্রহার

হযরত বারা ইবনে আজিব রাদিয়াল্লাহু তা'আলা বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মুনকার নাকির ফেরেশতার প্রশ্নের জবাব কাফের যখন উত্তর দেই, হায়! হায়! আমি জানিনা, তখন আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী আওয়াজ দিয়ে বলেন, এই ব্যক্তি মিথ্যা বলছে। তার পায়ের নিচে আগুন জ্বালিয়ে দাও, তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও এবং তার জন্য জাহান্নামের একটি দরজা খুলে দাও।

তখন জাহান্নামের একটি দরজা খুলে দেওয়া হয়। সেখান দিয়ে জাহান্নামের তাপ ও লোহাওয়া তার কবরে আসতে থাকে। তার কয়েক কবরকে এমন সংকীর্ণ করে দেওয়া হয় যে, তার এক পাশের পাঁজর অপর পাশে চলে যায়।

অতঃপর তাকে আজাব দেওয়ার জন্য এমন একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করা হয় যে চোখে দেখে না, কানে শুনেনা। তার নিকট লোহার হাতুড়ি থাকবে। সেই গাধ ার অবস্থা হল, তা দ্বারা কোন পাহাড়ে আঘাত করা হলে পাহাড় মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। যখন একবার গাধা মারা হয়, তখন মানুষ ও জিন জাতি ব্যতীত পৃথিবীর সকল প্রাণী সে আওয়াজ শুনতে পাইয়।

কেবল একবারের আঘাতেই সে মাটিতে পরিণত হয়ে যায়। পুনরায় তার শরীর রুহ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আহমাদ, আবু দাউদ।

বুখারী ও মুসলিম শরীফের এক রেওয়াতে আছে, গাধার আঘাতের কারণে মুর্দ া এমন জোরে চিৎকার করে ওঠে যে, মানুষও জিন ব্যতীত আশেপাশের সকল কিছুই সে চিৎকার শুনতে পায়।

এখানে একটি প্রশ্ন হতে পারে মুর্দাকে মারার আওয়াজ ও তার চিৎকারের শব্দ মানুষ ও জিনকে শোনানো হয় না কেন? এর উত্তর হল, সমস্ত মাখলুকের মধ্যে কেবল মানুষ ও জিনের বরযখের সাথে সম্পর্ক রয়েছে।

অতএব তাদেরকে যদি কবর আজাব দেখানো হয়, কিবা সেখানকার বিপদগ্রস্থদের চিৎকার ও কান্নাকাটির আওয়াজ শোনানো হয়, তাহলে তারা ঈমান এনে নেক আমল শুরু করে দিবে। অথচ আল্লাহর কাছে ঈমান বিল গায়েব অর্থাৎ না দেখে ঈমান আনাই কেবল গ্রহণীয়।

শুধুমাত্র নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা শুনেই ঈমান আনতে হবে, বুঝে আসুক কিংবা না আসুক। এই না দেখা বিষয়ে বিশ্বাস করাকেই ঈমান বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন নিশ্চয়ই যারা না দেখে আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও বিরাট পুরস্কার।

যদি জান্নাত-জাহান্নাম ও বর্জকের সমস্ত হালত মানুষকে দেখানো হয় তাহলে গায়েবের প্রতি ঈমান আনার বিষয়টির কোন মূল্য থাকে না। এগুলো দেখার পর সকলে মেনে নিবে এবং ঈমানদার হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহর নিকট চোখে দেখা বিষয়ের প্রতি ঈমান আনা গ্রহণযোগ্য নয়।

কেননা তখন আজাবের ফেরেশতা চোখের সামনে হাজির হয়ে যায়। জীবন পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে আমার আজাব দেখার পর তাদের ঈমান কোন কাজে আসলো না।

কেয়ামতের দিন মানুষ যখন কবর থেকে উঠবে এবং জান্নাত-জাহান্নাম নিজের চোখে দেখতে পাবে, তখন প্রত্যেকেই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং নবীজির বাণীসহকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে। কিন্তু তাদের ওই সময়কার ঈমান ও বিশ্বাস গ্রহণযোগ্য হবে না।

মানুষকে কবরের আজাব না দেখানো এবং মুর্দাদের চিৎকার না শোনানোর আর একটি কারণ এটাও হতে পারে যে, মানুষ তা সহ্য করতে পারবে না। যদি তারা কবর আজাবের অবস্থা নিজেদের কানে শুনতে পায় কিংবা চোখে দেখতে পায়, তাহলে সহ্য করতে না পেরে বেহুশ হয়ে পড়বে।

হযরত আবু সাঈদ কুদর ী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে: নবী করি ম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, লোকেরা যখন নাফরমান মুর্দাকে নিয়ে কবরের দিকে রওনা হয়, তখন মুর্দা বলতে থাকে, হায় আমার সর্বনাশ! তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে চলেছ? মুর্দার সেই বিলাপ ধনী মানুষ ছাড়া সকলে শুনতে পায়। মানুষ যদি সে আওয়াজ শুনতে পেতো, তাহলে বেহুশ হয়ে যেত। বুখারী শরীফ।

কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বরযখের বিভিন্ন অবস্থা জানানোর সাথে সাথে দেখিয়েও দিয়েছেন। কেননা তার মাঝে তা বরদাস্ত করার ক্ষমতা বিদ্যমান ছিল। তাই দেখা যায়, জাহান্নামের ভয়াবহ দৃশ্য অবলোকন করার পরেও তার হাসি আনন্দ, কথাবার্তা, সাহাবাদের সাথে উঠা- বসা ও পানাহারের কোন পার্থক্য প্রকাশ পায়নি।

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা থেকে বর্ণিত আছে: একদিন সূর্য ডোবার পর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার বাইরে তাসরিফ নিলেন। তিনি সেখানে এক বিরাট আওয়াজ শুনতে পেয়ে বললেন, ইয়াহুদিদেরকে তাদের কবরের আজাব দেওয়া হচ্ছে। বুখারী মুসলিম।

হযরত যায়েদ বিন সাবেত রাদিয়াল্লাহু তা'আলা বর্ণনা করেন: একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খচ্চরে চড়ে বনু নাজ্জার গোত্রের বাগিচার দিকে যাচ্ছিলেন। আমরাও তখন তার সাথে ছিলাম। হঠাৎ খচ্চরটি এমনভাবে চমকে উঠল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম খাচরের পিঠ থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো।

সেখানে পাঁচটি কিংবা ছয়টি কভার ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এ কবরবাসীদের পরিচয় কারো জানা আছে কি? এক ব্যক্তি বলল আমি জানি। রাসুলুল্লাহ সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কবে মারা গিয়েছে? সে বলল, জাহেলী যুগে মারা গিয়েছে।

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এরশাদ করলেন, মানুষকে কবরের মধ্যে আজাব দেওয়া হয়। আমরা যদি এ আশঙ্কা না হতে যে, তোমরা মৃতদেহকে দাফন করা পরিত্যাগ করবে, তাহলে আমি অবশ্যই আল্লাহর নিকট দোয়া করতাম, যেন আমার নাই তোমাদের কেউ কবরের কিছু আজাব শোনানো হয়, মুসলিম শরীফ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url