কই মাছ চাষ পদ্ধতি | কই মাছের বৈশিষ্ট্য
আসসালামু আলাইকুম সম্মানিত মাছ চাষি ভাই ও বোনেরা, আপনারা আজকে জেনে খুশি হবেন যে, যারা কৈই মাছ চাষ করতে আগ্রহী এবং ঘরোয়া পরিবেশেই হোক বা বাণিজ্যিকভাবেই হোক তাদের উদ্দেশ্যে আমার এই পোস্টটি লেখা। আমি আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানিয়ে দিব যে কিভাবে কৈ মাছ চাষ করলে অল্প সময়ে সফলতা লাভ করতে পারবেন। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনার দিকে যাওয়া যাক।
কৈই মাছ বাংলাদেশের মানুষের কাছে আবহমান কাল ধরে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু মাছ হিসেবে পরিচিত। আমরা মাছের ভাতে বাঙালি এবং কোন মাছে কতটুকু স্বাদ আছে তা গ্রহণ না করলে বা না খাওয়া পর্যন্ত আমরা বিশ্বাস করিনা। তাই আমরা সহজে বলতে পারি কই মাছ খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু একটি মাছ।
আরো পড়ুন,
অন্যান্য মাছের তুলনায় কৈই মাছ জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায় বলে এই মাছটি বাজার মূল্য তুলনামূলকভাবে অনেকটাই বেশি হয়ে থাকে। বিগত কয়েক বছর আগে এই মাছটি খাল বিল পুকুরডোবা হাওর বাওর এবং প্লাবনভূমিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত কিন্তু বর্তমানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও শেষ বাদ নির্মাণ এবং প্রকৃতি জলাশয়ের ভরাট হয়ে যাওয়ায় গভীরতা কমে গেছে।
তাই শিল্প কারখানার বর্জ্য পদার্থ এবং পৌর ও কৃষি আবর্জনার জন্য পানি দূষণ ইত্যাদি কারণে মাছ আহরণ আর সেই সাথে মাছের রোগ বালাই বৃদ্ধির কারণে অভ্যন্তরীণ জলাশে এই মাসটির প্রাচুর্য তো কমে যায়। এইদিকে নদী নালা খাল বিল প্লাবন ও মোহনার প্রাকৃতিক বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্রে বিনষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাসটি ইতিমধ্যে বিপন্ন প্রজাতির মাছ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
দেশীয় প্রজাতির অত্যন্ত মূল্যবান এই মাছটির বিলুপ্ত রোধ কল্পে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নিবিড় গবেষণার এক কৃত্রিম প্রজনন উৎপাদন ও চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সফলতা লাভ করেছে বলে জানা যায়। সর্বশেষ প্রেক্ষিতে কৈ মাছ পোনা প্রাপ্তি ও চাষ পদ্ধতি যেমন সুগম রয়েছে তেমনি এ মাসটিকে বিরক্তির হাত থেকে রক্ষা করে এর বৈচিত্র সংরক্ষণের পথ উন্মোচিত করা হয়েছে।
কই মাছের বৈশিষ্ট্য বলিঃ
কই মাছের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য বলে রয়েছে যেগুলো আমরা সচরাচর জানিনা বা হয়তো তা চলাফেরায় বা আচরণ বা গুনাবলীগুলো চোখের সামনে ভেসে আসে তো চলুন কিসব বৈশিষ্ট্য গুলো একটু জেনে নেয়া যাক। কৈ মাছ সাধারণত আগাছা কচুরিপানা এবং ডালপালা অধ্যুষিত স্বাচ্ছন্দে বসবাস করে থাকে।
কম গভীরতা সম্পূর্ণ পুকুরে এদের চাষ করা যায় এবং অতিরক্ত শাসন অঙ্গ থাকাই এরা বাতাসে থেকে অক্সিজেন নিতে দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে। বিধায় জীবিত অবস্থায় বাজারজাত করা যায় এবং এরা কম রোগ বালাই ও বিরূপ প্রকৃতির পরিবেশ অত্যন্ত সহনশীল তাই এ মাছটি সব পরিবেশ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেই সহনশীল।
পুকুর নির্বাচন এবং প্রস্তুতি গ্রহণঃ
কৈ মাছ চাষের জন্য সাধারণত চার থেকে পাঁচ মাস পানি থাকে এইরকম ১৫ থেকে ৫০ শতাংশের পুকুর নির্বাচন করাটা উত্তম। পুকুর শুকিয়ে অবাঞ্ছিত মাছ ও জলজ প্রাণী দূর করে নিতে হবে কেননা পোনা মজুদের পূর্বে প্রতি শতাংশে এক কেজি হারে কালী এবং চুন প্রয়োগ আবশ্যক। চুন প্রয়োগের পাঁচ দিন পরে পোনা মসজিদের ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিশেষ করে যদি আমরা কৈ মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি সঠিকভাবে গ্রহণ না করে তাহলে বাণিজ্যিকভাবে কৈ মাছ চাষ করা অত্যন্ত জটিল এবং কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই কৈ মাছ চাষের জন্য প্রথমেই আমাদের মাথায় রাখতে হবে পুকুর নির্বাচন কিভাবে করব এবং তার প্রস্তুতি গ্রহণ করাটা খুবই জরুরী।
কই মাছের পোনা মজুদ ও ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াঃ
কই মাছের পোনা মজুদ এবং ব্যবস্থাপনা প্রিয়ার শুরুর আগে প্রস্তুতকৃত পুকুরে প্রতি শতাংশে এক গ্রাম ওজনের সুস্থ সবল যা কিনা ৩০০ থেকে ৩৫০ টি পোনা মজুদ করে রাখতে হবে। কোন মজুদের দিন থেকে ৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ সম্পূরক সিলেট খাদ্য মাছের দেহ ওজনের জন্য ১৫ থেকে ৪% হারে সকাল ও বিকেলে পুকুরে ছিটিয়ে সরবরাহ করে দিতে হবে। প্রতি ১৫ দিন পর পর জাল টেনে মাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে নিতে হবে কেননা খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করাটা অত্যন্তই জরুরী।
কই মাছের পুকুরে প্রচুর প্লানটনের আধিক্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে এই প্লাংটং নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি শতাংশে ৮ থেকে ১০ টি মনোসেক্স তেলাপিয়া দুই থেকে তিনটি সিলভার কাপের পোনা ছেড়ে দিতে হবে। মাছ আহারন ও উৎপাদন নিবিড় পদ্ধতিতে কই মাছ চাষ করলে চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে এই কৈ মাছ।
এই সময় জাল টেনে এবং পুকুরে সমস্ত পানি শুকিয়ে মাছ ধরার ব্যবস্থা নিতে হবে কেননা এ পদ্ধতিতে ৫ থেকে ৬ মাসে হেক্টর প্রতি চার থেকে পাঁচশ কেজি কৈ মাছ ৫০০ কেজের গিফট তেলাপিয়া ও ২৫০ থেকে ৩০০ কেজির সিলভার কাপ মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। এই ভাই এক হেক্টর জলাশয়ে পাঁচ থেকে ছয় মাসে দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জন করা অসম্ভব বলে কোন কথা নয়।
অপেক্ষাকৃত ভালো উৎপাদন পাওয়ার লক্ষ্যে নিম্ন বর্ণিত বিষয় সমূহের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কৈ মাছ চাষে পানির গুনাগুন মাছ চাষের উপযোগী রাখার জন্য পিএইচ ৭ থেকে ৮ ও এমোনিয়া ০.২মিলিম িটার মাত্রা রাখা অত্যন্ত জরুরী।
এজন্য প্রতি ১৫ দিন পর পর চুন ২৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম শতাংশ পুকুরের প্রয়োগ করলে খুব ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাবে। তাছাড়া লবণ ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম শতাংশ হারে প্রতি মাসে পুকুরে ব্যবহার করলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
পুকুরের পানি গুণাগুণ উপযোগী রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে রাখতে হবে কেননা ভালো হ্যাচারি হতে পোনা সংগ্রহ করতে হবে যা কোনভাবেই ক্রস ব্রেড পোনা ব্যবহার করা যাবে না। আগামী উৎপাদিত পোনা অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে উৎপাদিত কই পোনা চাষে ব্যবহার করা যাবে না। কই মাছের পণার জন্য নমুনায়ন করে মাছের সঠিক গড় ওজন নির্ধারণ-পূর্বক খাদ্য প্রয়োগ এবং সপ্তাহে একদিন খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।
কৈ মাছ চাষের জৈব নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণঃ
কই মাছ চাষের জন্য যুব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কুকুরের চারদিকে এবং উপরে ছোটখাছের জাল ব্যবহার করতে হবে তা না হলে রোগ জীবাণু সহজে এক পুকুর হতে অন্য পুকুরে প্রমাণিত হবে না। কই চাষের পুকুরে গরু ছাগলের গোসল ধৌত করা থেকে বিরত রাখতে হবে।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url