পুকুরে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি | শিং মাছের রোগ ও প্রতিকার|।
আসসালামু আলাইকুম সম্মানিত মৎস্য চাষী ভাই ও বোনেরা আপনারা যারা পুকুর নালা বা আধুনিক পদ্ধতির ড্রাম এর মাধ্যমে মৎস্য চাষ করে থাকেন তাদের উদ্দেশ্যে আমার এই পোস্টে লিখ। আপনারা কিভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করবেন সেই সম্পর্কে কিছু লিখব।
অবশ্যই আপনারা আমার এই পোস্টটিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে আধুনিক পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করে অল্প সময়ে কিভাবে লাভ কমানো হওয়া যায়।
আরো পড়ুন,
সিং মাছ চাষের পদ্ধতি।
পুকুরে বা নালা অথবা আধুনিক প্রক্রিয়ায় ড্রাম তৈরির মাধ্যমে শিং মাছ চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। ভালো করে শিং মাছ চাষ করতে পারলে কাপ জাতীয় মাছের তুলনায় শিং মাছ চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তাছাড়া কৃত্রিম প্রজন্মের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশি শিং মাছের পোনা উৎপাদন এবং চাষ করা সম্ভব হয়ে থাকে।
কেননা বর্তমানে শিং মাছ বাজারে একটি দামি মাছ হিসেবে আখ্যায়িত বা পরিবেশিত হয়ে থাকে। কথায় আছে শিং মাছ খেলে দ্রুত রক্ত বৃদ্ধি পায় তাহলে জেনে নিন কিভাবে শিং মাছ চাষ করবেন।
পোনা মজুদ পদ্ধতি।
শিং মাছ চাষের জন্য সাধারণত এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত দেশী সিং মাছের পোনা পাওয়া যায়। দেশি শিং মাছের চাষের জন্য এক ক ৫০০ থেকে ১০০০ পোনা ছাড়াও উত্তম এবং কিছু কাপ জাতীয় মাছের পোনা ছাড়লে পুকুরে পরিবেশ ভালো থাকে।
শিং মাছ চাষে জন্য পুকুর নির্বাচন।
শিং মাছ চাষের জন্য সাধারণত কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। যেসব বিষয়গুলো বিবেচনা রাখা উচিত তা নিচে কিছু উল্লেখ করা হলো।
- শিং মাছ চাষের জন্য পুকুরটি অবশ্যই বন্যার পানি মুক্ত হতে হবে।
- পুকুর অথবা নালার পাড় মজবুত হতে হবে। কেননা পুকুর ছিদ্র বা গর্তের প্রভাব থাকলে সমস্ত শিং মাছ চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
- বৃষ্টির সময় পানির উচ্চতা চার থেকে পাঁচ ফুট বেশি যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে অর্থাৎ এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে।
- পুকুর বা নালা আয় তো কার হলে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।
- পুকুরের আয়তন সাধারণত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে হলে খুবই ভালো হবে।
- এক প্রান্ত অনুপ্রান্তের চেয়ে এক ফুট ঢালু রাখা ভালো।
পুকুর প্রস্তুত পদ্ধতি।
শিং মাছ চাষের জন্য নতুন পুকুরের চেয়ে পুরাতন পুকুরের শিং মাছ চাষ অত্যন্ত এবং লাভজনক হয়ে থাকে। কেননা নতুন পুকুর হলে ভালোভাবে চাষ দিয়ে প্রতি শতাংশে কমপক্ষে ২৫ কেজি গোবর ও ভালোভাবে ময় দিয়ে তারপর চুন দিতে হবে। এবং পুরনো পুকুর হলে প্রথমে চেক দিয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে।
এরপর চুন দিতে হবে শতাংশ প্রতি এক থেকে দেড় কেজি। এরপর চারদিকে জাল দিয়ে ভালোভাবে ঘের করে দিতে হবে। পুকুরে চারপাশে ঝাল দেওয়ার পর মটর ইঞ্জিন দিয়ে দুই থেকে তিন ফুট পরিষ্কার পানি দিতে হবে। পানি দেওয়ার তিন থেকে চার দিনের মধ্যে কোনা ছাড়া উত্তম সময় এবং পোনা ছাড়ার পর এক ইঞ্চি হাসের একটি জাল দিয়ে রাখতে হবে।
মজুদ এবং ঘনত্ব বিশ্লেষণ।
শিং মাছ বর্তমানে এককভাবে ও মিশ্রভাবে চাষ করা যায়। শিং মাছ মিশ্রভাবে চাষ করতে হলে কাপ জাতীয় মাছের সাথে প্রতি শতাংশে ৩৫ থেকে ৪০ টি পর্যন্ত আঙ্গুলের সাইজের শিং মাছের পোনা ছাড়তে হবে এবং পোনা মজুদের সময় পোনাকে এন্টি ফাঙ্গাস মেডিসিন দিয়ে গোসল করে দিতে হবে এরপর পুকুরে পোনাগুলো ছেড়ে দিতে হবে।
কাপ জাতীয় মাছ ছাড়া তেলাপিয়া এবং পাঙ্গাসের সাথেও শিং মাছের মিশ্র চাষ করা যেতে পারে সেক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে পঞ্চাশ থেকে সাতটি পর্যন্ত শিং মাছের পোনা মিশ্রভাবে ছাড়া যেতে পারে। কাপ জাতীয় মাছ অর্থাৎ তেলাপিয়া বা পা ভাঙাস এর সাথে শিং মাছ চাষ করলে বাড়তি খাবারের প্রয়োজনীয় হয় না।
খাবার প্রয়োগ ও বিধিমালা।
শিং মাছের পোনা মজুদের পর প্রথম ১০ থেকে ১২ দিন দৈনিক মাসের ওজনের জন্য ২০ পার্সেন্ট খাবার প্রয়োগ। ছোট শিং মাছ থাকা অবস্থায় সাধারণত রাতের বেলায় খেতে পছন্দ করে তাই 20% খাবার কে দুই বেলায় সমান ভাগে ভাগ করে দিতে হবে।
অর্থাৎ ভোরের দিকে একটু অন্ধকার থাকতে প্রয়োগ করতে হবে। শিং মাছের পোনা মজিদের পরে দশ দিন ১৫% হারে এবং এর পরের ১০ দিন মাসের ওজনের 10 শতাংশ হারে পুকুরে খাবার প্রয়োগ করতে হবে।
এভাবে এক মাছ খাবার প্রয়োগের পর 5% হারে পুকুরে খাবার দিতে হবে যাতে শিং মাছ তিন ইঞ্চি হওয়ার সাথে সাথে দিনের বেলাতে খাবার দিতে পারা যায়। সন্ধ্যার পর যে খাবার দেওয়া হয় সেটি সন্ধ্যার একটু আগে এনে আস্তে আস্তে বিকেলের দিকে দেওয়াটাই ভালো হবে।
অন্যদিকে ভোর বেলার খাবার কেমন করে দিতে হবে যাতে সকাল 9 টা থেকে দশটার দিকে পিছিয়ে আনতে হবে। শিং মাছের ওজন ১৫ থেকে ২০ গ্রাম হলে ৩ পার্সেন্ট এর অধিক খাবার দেওয়ায় মোটেই ঠিক নয় এবং বিক্রির আগ পর্যন্ত খাবার বজায় রাখতে হবে।
মাছের উত্তোলন ও নীতিমালা।
অন্যান্য মাছ জাল টেনে ধরা গেলেও শিং মাছ কিন্তু জাল টেনে ধরা মোটেই সম্ভব নয়। শিং মাছ ধরতে হলে শেষ রাতের দিকে পুকুরে শেষ দিয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে এবং শিং মাছ ধরার উত্তম সময় হলো ভোরবেলা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত।
এ মাছ ধরার পর মাঝ থেকে গেলে মোটর ইঞ্জিন দিয়ে কমপক্ষে দুই ফুট ঠান্ডা পানি দিয়ে পুকুর ভরে রাখতে হবে যা কিনা পরের দিন আবারো একই নিয়মে মাছ ধরতে পারা যায়। শিং মাছের পুকুর একপাশে ঢালু রাখার দরকার কেননা সমস্ত পুকুর জুড়ে মাছ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে পছন্দ করে।
সাবধানতা ও অবলম্বন।
শিং মাছের কাঁটা বিধিয়ে সেখানে খুবই ব্যথা লাগে এবং কাঁটা বিছানোর জায়গায় ব্যথা নাশক মলম লাগিয়ে গরম পানি দিলে সাথে সাথে কিছুটা উপশম পাওয়া যায়। এছাড়া মলম লাগিয়ে গরম বালির ছেকা দিলেও অনেকটাই তুলনামূলকভাবে আরাম পাওয়া যায় তাই শিং মাছ ধরার আগে এমন ব্যবস্থা রাখলে মন্দ কাজ হবে না। একটু সাবধানতার সহিত শিং মাছ ধরলে এসবের কিছুর প্রয়োজন হবে না।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url