তেলাপিয়া মাছের মিশ্র চাষ | তেলাপিয়া মাছের বৈশিষ্ট্য | তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা।
আসসালামু আলাইকুম, মাছ চাষী ভাইরা আপনাদের মাঝে আজকে আমি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব, তা হল তেলাপিয়া মাছ চাষ করবেন কিভাবে। তেলাপিয়া বা মনোসেক্স মাছ চাষ করা সম্পর্কে জানার আগে অবশ্যই আমার অনুরোধ থাকলো এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে তেলাপিয়া মাছ কিভাবে চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।
তেলাপিয়া মাছ বর্তমানে বাংলাদেশের মৎস্য চাষের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে যা কিনা স্থানীয় বাজারে চাহিদা ও উচ্চ বাজারে মূল্যে খামারে বর্তমানে অধিক হারে এ মাছ চাষ করে থাকেন। প্রাকৃতিতে খাবারের গ্রহণের দক্ষতা সম্পূরক খাবারে প্রতি আগ্রহ বিরূপ প্রকৃতির পরিবেশে টিকে থাকায় এই অধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কারী মাছ চাষীদের কাছে এর জন্য প্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আরো পড়ুন,
তাছাড়া বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারেও এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। তেলাপিয়া মাছ ১৫ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় টিকে থাকতে পারে বলে ধারণা করা যায় এবং ২০ থেকে ৩৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বৃদ্ধি হয়ে থাকে।
তেলাপিয়া মাছ পরিচিতি।
বর্তমানে বাংলাদেশের জলপ্রায়াতে একই প্রকুরে কমপক্ষে দুইবার মনোসেক্স বা তেলাপিয়া মাছ চাষ করা সম্ভব হয়ে থাকে। ভবিষ্যতে আমাদের চাষ পদ্ধতি ও উৎপাদন ব্যবস্থা উন্নয়ন করা গেলে তেলাপিয়া মাছের বিশাল ভাবে আন্তর্জাতিক বাজারেও অবস্থান করে নিতে পারবে বলে ধারণা করা যায়। তাই বাংলাদেশে মনোসেক্স বা তেলাপিয়া মাছ চাষের বেশ উজ্জ্বলতা সম্ভাবনা রয়েছে।
তেলাপিয়া বা মনোসেক্স মাছ কি?
বাংলাদেশের তেলাপিয়া মাছ চাষের বড় সমস্যা হলো এর অনিয়ন্ত্রিত বংশবৃদ্ধি বা বিস্তার। এই কারণে অনিয়ন্ত্রিত বংশ বিস্তারের জন্য পুকুরে বিভিন্ন আকারে তেলাপিয়া মাছ দেখা যায়। এতে করে আশানুরূপ প্রজনন ক্ষেত্রে বংশবিস্তার করতে সক্ষম। প্রকৃতপক্ষে পুরুষ তেলাপিয়া মাছ দৈহিক বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে এ ধারণাকে কাজে লাগিয়ে শুধুমাত্র পুরুষ তেলাপিয়া মাছের চাষকে মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ বলা হয়।
এই প্রজাতির সম্পূরক খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত এবং প্রতিকূল পরিবেশে ও টিকে থাকতে পারে এর জন্য অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায় এবং প্রয়োজনের জন্য পুকুরের পাড়ে গর্ত করে না। বর্তমানে শুধু পুরুষ তেলাপিয়া বা মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষে খামারিদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
মনোসেক্স বা তেলাপিয়া মাছের অধিক গুরুত্ব।
তেলাপিয়া মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং উচ্চ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতেও পারে। এই মাছ চাষাবাদ ব্যবস্থা করা খুবই সহজতোর বলে মনে করা হয়। মোনোসেক্স বা তেলাপিয়া শুধুমাত্র পুরুষ তেলাপিয়া হয় স্ত্রী তেলাপিয়ার অভাবে প্রয়োজন সম্পন্ন করতে পারে না বলে ধারণা করা যায়। ফলে পুকুরের বাচ্চা হয় না এবং চাষের কোন ভিন্ন ঘটতে পারে না তাই সম্পূরক খাবার দিয়ে অধিক ভাবে চাষ করা সম্ভব হয়।
মনোসেক্স বা তেলাপিয়া মাছ চাষ পদ্ধতি।
মনোসেক্স বা তেলাপিয়া 2 ধাপে অর্থাৎ নার্সারি বা মজুদপুকুরে চাষ করা যায় এতে করে কম সময়ে একই পুকুরে অনেক বেশি উৎপাদন করাও সম্ভব।
মাছ চাষের পুকুর নির্বাচন।
দুই ফুট থেকে সাড়ে চার ফুট গভীরতায় পুকুরে তেলাপিয়া নার্সারির জন্য অত্যন্ত উপযোগী বলে মনে করা যায় এবং পুকুরে নির্বাচনের সময় খেয়াল রাখতে হবে। যা কিনা পুকুরের পাড়সমূহ যেন মজবুত ও বন্যা মুক্ত থাকে এবং পুকুরের পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে যা পুকুরটি যেন আগাছা মুক্ত থাকে।
নার্সারি ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র।
প্রথমে সম্পূর্ণ পুকুর শুকিয়ে অথবা রোডেরিন বা কীটনাশক জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করে রাক্ষসে বা অবাঞ্চিত মাছ গুলোকে দমন করে নিতে হবে এরপর প্রতি শতকে দেড় থেকে ২ কেজি চুন এবং পাঁচ থেকে সাত কেজি গোবর ও ১০০ থেকে ১ ৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৫০ থেকে ৮০ গ্রাম টিএসপি ২০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। এরপর পুকুরের চারদিকে জাল দিয়ে এমন ভাবে ঘিরে দিতে হবে যেন ব্যাংক বা অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রব্য না হয়
পুকুরে পোনা মজুদ পদ্ধতি।
পুকুরে মাছ চাষের জন্য স্যার প্রয়োগের ৫ থেকে ৭ দিন পর প্রতি শতকের জন্য ২০ থেকে ৩০ দিন বয়সের ১০০০ থেকে ২ হাজার টি তেলাপিয়া মজুদ করতে হবে যা মজুদকৃত পোনার মোট ওজনের 10 থেকে 15 পারসেন্ট হারে অর্থাৎ ৩৫ পার্সেন্ট খাবার দিনে তিন থেকে চার বার দিতে হবে। এভাবে নার্সারি বা পুকুরে ৪০ থেকে ৫০ দিন পোনা পালন করে পোনার ওজন ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম হলে মজুদ পুকুরে নিয়ে ছাড়া যেতে পারে।
পুকুর মজুদ ব্যবস্থাপনা।
মাছ চাষের জন্য মজুদ পুকুর ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা মজুদ পুকুরের গভীরতা কোন সমস্যা হয় না। ফলে বেশি গভীরতা পুকুর ও তেলাপিয়া মাছ চাষ বা ব্যবহার করা যায়।
প্রথমেই সম্পূর্ণ পুকুর শুকিয়ে অথবা বারবার জাল টেনে কিংবা রোটেনের ওষুধ বা কীটনাশক প্রয়োগ করে রাক্ষসে অবাঞ্ছিত মাছ দূর করে নিতে হবে। পুকুরে উৎপাদিত বীজ থেকে ২৫ গ্রাম ওজনের পোনা থেকে প্রতি শতকে ২০০ থেকে ২৫০ টি হারে পোনা মজুদ করতে হবে। পুকুরের প্রাকৃতিক খাবারের যাতে অভাব না হয় সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে এবং সাত দিন পর পর প্রতি শতকে চার থেকে পাঁচ কেজি গোবর এবং দুই থেকে তিন কেজি মুরগির বিষ্ঠা ও ৩৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৯ গাম দিতে হবে।
তবে পরবর্তীতে খাবারের পরিমাণ প্লাস মাইনাস করা যেতে পারে। তবে পরবর্তীতে খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে স্যার বন্ধ করে দিতে হবে। মাছের গড় ওজন যখন ১০০ থেকে ১২০ গ্রামের বেশি হয় তখন দৈনিক ৫% হারে পুকুরের পানি পরিবর্তন করে দিলে ভালো ফলন পাওয়া যেতে পারে।
মজুদের পরিমাণ ১০০ থেকে ১২০ দিন পর মাসের গড় ওজন 200 থেকে 300 গ্রাম হয়ে যায়। তখন থেকে মাছ বিক্রি করা যেতে পারে বলে ধারণা করা হয়। যখন মাছের গড় ওজন ৩০০ থেকে ৫৫০ গ্রাম হয় তখন বাজারে চাহিদার উপর ভিত্তি করে সব মাছ ধরে বিক্রি করা যেতে পারে।
তেলাপিয়া বা মৎস্য চাষ প্রয়োগ বা খাদ্য তালিকা।
তেলাপিয়া মাছ চাষের খাদ্য তালিকা খাবারের শ্রেণী অনুযায়ী মাছের গড় দৈনিক খাদ্য প্রয়োগের হার ওজন দেহের ওজন স্টার্টার ১ থেকে ২০ অর্থাৎ ১০% এবং ৩ ২৫০ থেকে ১০০ পার্সেন্ট ৬.৮ ৩ স্টার্টার ১ থেকে ১০০ এবং পাঁচ থেকে ছয় উগ্রয়ার ও ২২০০ গুহ এর মধ্যে এক পয়েন্ট পাঁচ থেকে চার পার্সেন্ট।
পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী বা বিশ্বব্যাপী মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমাদের দেশে প্রভৃতি ও আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় মনোসেক্স বা তেলাপিয়া মাছের চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাছাড়া চাষে কম সময় এবং সম্পূরক খাদ্য গ্রহণের অভ্যস্ততা দ্রুত বেড়ে ওঠ া ক্ষমতা রাখে।
সর্বোপরি বাজার মূল্যে বেশি থাকায় বর্তমানে অধিকাংশ মৎস্য চাষী মনসেক্স তেলাপিয়া চাষে এগিয়ে আসেছেন যা আমিষের চাহিদা পূরণ করবে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চাষ উন্মোচন করতে পারলেই সম্পূর্ণ ভাবে নতুন দুয়ার খুলে যেতে পারে।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url