মাসকলাই চাষের সময় | মাসকলাই এর পোকা দমন | মাসকলাই ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা ।
মাসকালাই পুষ্টি মূল্য নির্ধারণঃ- মাসকালাই ডালে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য শক্তি ও প্রোটিন রয়েছে।
ব্যবহারঃ- মাস কালাই ডাল হিসেবে প্রধানত খাওয়া হয়।
উপযুক্ত জমি এবং মাটি নির্বাচন ও প্রস্তুতকরণঃ
বেলে দোয়াস ও পলি দোয়াস মাটি মাঝারি উঁচু এবং শুনিসকাসিত জমি মুখ আমাদের জন্য বেশ উপযোগী।
মাসকালাই জাত পরিচিতিঃ
বারি মাস কালাই ১ পান্তঃ- এ জাতের বীজের রং কালচে বাদামি হয়ে থাকে এবং বীজের আকার ও অনেক বড়। বিজের ওজন ৩৮ থেকে ৪৩ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। জাতটি দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিস-১ ও খরিপ-২ মৌসুমে চাষ করা হয়। ডাল রান্নার সময় কাল 30 থেকে 35 মিনিট।
আমিসের পরিমাণ ২১ থেকে ২ ৩% পর্যন্ত। জীবনকাল ৬৫ থেকে ৭০ দিন পর্যন্ত হয় এবং ফলন হেক্টর প্রতি দেড় থেকে দুই টন পর্যন্ত হয়। এ জাত হলুদেও মোজাইক ভাইরাস রোগ বিরাজমান।
আরো পড়ুন,
বারি মাস কালাই ২ সরৎঃ- স্থানীয় জাতের মত লাগানোর না হয় না এবং পত্রফলক মাঝারি শুরু হয়ে থাকে। পাকা ফলের রং কালচে হল খাড়া হলের গায়ে চুল থাকে এবং বীজের রং কালচে হয়ে থাকে। বীজের আকার স্থানীয় যাতে চেয়ে একটু বেশি বড়। হাজার বীজের দানার ওজন ৩২ থেকে ৩৬ গ্রাম পর্যন্ত।
ডাল রান্নার সময়কাল ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট এবং আমিষের পরিমাণ ২১ থেকে ২৪% পর্যন্ত হয়। এই কালাইয়ের জীবনকাল ৬৫ থেকে ৭০ দিন এবং ফলন হেক্টর প্রতি এক থেকে দুই টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। যাতটি দিবস নিরপেক্ষ এবং হলুদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহজে।
বারি মাস কালাই ৩ হেমন্তঃ- এই জাতের গাছের আকার মাধ্যম হয়ে থাকে। এবং স্থানীয় জাতের মত লতানো হয় না। ফল পাকলে কালো রং হয় ও শুটকি ঘন চুল আছে। বীজের রং কালছে, বীজের আকার স্থানীয় জাতের চেয়ে বড়। হাজার দানার বীজের ওজন ৪০ থেকে ৪৫ গ্রাম পর্যন্ত হয় এবং আমিসের পরিমাণ ২১ থেকে ২৪% পর্যন্ত। এই জাতের কালায়ের জীবনকাল ৬৫ থেকে ৭০ দিন পর্যন্ত হয় ফলন হেক্টর প্রতি এক থেকে দুই জন পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই জাত হলদি মজাই ক ভাইরাস রোগ সহনশীল হয়।
বীজ বপন পদ্ধতিঃ- এই জাতের কালাই বিজ ছিটিয়ে এবং সারি করে ভবন করা হয়ে থাকে। প্রতি শারিতে বপনের ক্ষেত্রে দ্রুত ৩০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে। খরিফ ২ মৌসুমী চিঠিয়ে বলা যায় এবং প্রতি হেক্টরে ৩৫ থেকে ৪০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। ছিটিয়ে বাবনের ক্ষেত্রে এ জাতের বীজের পরিমাণ কিছু বেশি দিতে হয় ও এলাকা ভেদে বপনের সময়ের তারতম দেখা যায়।
খরিফ ১ মৌসুমে মধ্য ফাল্গুন থেকে ৩০ শে ফাল্গুন অর্থাৎ ফেব্রুয়ারীর শেষে হইতে মধ্য মাঠ পর্যন্ত। খরিফ দুই মৌসুমী পহেলা ভাদ্র থেকে ১৫ ভাদ্র অর্থাৎ আগস্টের ১৫ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত। তবে মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বপন করা যায়।
সারের নাম পরিমাণ এবং কেজি নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
- ইউরিয়া ৪০ থেকে ৫০ কেজি।
- ইডিএসপি ৮৫ থেকে ৯৫ কেজি।
- এম ওপি ৩০ থেকে ৪০ কেজি।
- অনুজীব সার চার থেকে পাঁচ কেজি।
উপরিউক্ত সারগুলো শেষ চাষের সময় সমুধা সার প্রয়োগ করতে হবে এবং অপ্রচলিত এলাকায় আমাদের জন্য সুপারিশ মোতাবেক নির্দিষ্ট অনুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৮০ গ্রাম হারে অণুজীবী সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।ইনো খুলাম স্যার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় না।
কালায়ের সেচ ও আগাছা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
বপনের ২০ দিনের মধ্যে একবার আগাছা দমন করা খুবই প্রয়োজন এবং বৃষ্টিপাতের ফলে যাতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেজন্য অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা খুব জরুরী।
রোগবালাই দমনও ব্যবস্থাপনাঃ
রোগের নামঃ- পাতার দাগ রোগ।
ক্ষতির নমুনাঃ- পাতায় ছোট ছোট লালচে বাদামী বর্ণের গোলাকৃতির হতে ডিম্বাকৃতি দাগ পড়ে যায় এবং আক্রান্ত পাতার উপর ছিদ্র হয়ে যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যেতে পারে। পরিত্যক্ত ফসলের অংশ বায়ো বৃষ্টির মাধ্যমে এই রোগ বিস্তার লাভ করে থাকে।
অনুকূল পরিবেশঃ- বেশি আদ্রতা ৮০% এবং উচ্চতা তাপে ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এ রোগ দূরত্ব বিস্তার লাভ করে।
ব্যবস্থাপনাঃ- ব্যাভিস্টিন ০.২% নামক ছত্রাক নাশক ১২ থেকে ১৫ দিন পর পর দুই থেকে তিনবার স্প্রে করতে হবে এবং রোগ প্রতিরোধ বাহির জাত ব্যবহার করতে হয়।
রোগের নাম পাউডারী মিলডিউঃ
ক্ষতির নমুনাঃ- এ রোগে পাতায় পাউডারের মতো আবরণ পড়ে যায়। সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা দিতে পারে এবং বীজ পরিত্যক্ত গাছের অংশ ও বায়ুর মাধ্যমে এর রোগ বিস্তার লাভ করে থাকে।
রোগ বালাই দমন ও ব্যবস্থাপনাঃ
বিকল্প পোশাক ও গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং টিল্ট ২৫০ গ্রাম বাচিও ভেট ০.২% ১০ থেকে ১২ দিন পর পর তিন থেকে দুইবার স্প্রে করতে হবে।
রোগের নামঃ- হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ।
ক্ষতির নমুনাঃ- মুজাইক ভাইরাস দ্বারা এ রোগ বেশি হয়ে থাকে। আক্রান্ত পাতা উপর হলদে সবুজ দাগ পড়ে যায়। সাধারণত কচি পাতা প্রথমে আক্রান্ত হয় এবং আক্রান্ত বীজ ও বায়ুর মাধ্যমে এরূপ বিস্তার লাভ করে। সাদা মাছি নামক পোকা এ রোগের বাহক হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
অনুকূল পরিবেশঃ- বিকল্প পোষক ও সাদা মাছের আধিক্য এ রোগ দ্রুত বিস্তার সহায়ক।
ব্যবস্থাপনাঃ
রোগমুক্ত বিষ ব্যবহার করতে হবে এবং সাদামাছি দমনের জন্য অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ফসল তোলা ও সংগ্রহঃ
খরিফ এক মৌসুমে মধ্যে বৈশাখ মে মাসের শেষ এবং খরিপ মৌসুমে মধ্যখাত্তিক থেকে অক্টোবর মাসের শেষ মাসে ফসল সংগ্রহ করতে হবে।
গুদামজাত ডালে পোকা ব্যবস্থাপনার ভূমিকাঃ
পূর্ণবয়স্ক পোকা ও ক্রীড়া। উভয় গুদামজাদ্দারের ক্ষতি করে থাকে। এই পোকা ডালের খোসা ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে শ্বাস খেতে থাকে এবং দানা হালকা হয়ে যায়। এর ফলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় ও খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
গুদামজাত ব্যবস্থাপনাঃ
গুদামজাত করার আগে দানা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে যাতে দানা শুকিয়ে পানির পরিমাণ ১২% এর নিচে চলে আসে। বীজের জন্য টন প্রতি ৩০০ গ্রাম মালাথিয়ন বা সেভিং ১০% গোড়া মিশিয়ে পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url