ছোলা চাষের সময় | ছোলা গাছের বৈশিষ্ট্য | ছোলা বীজের অঙ্কুরোদগম পদ্ধতি।
ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য শক্তি ও প্রোটিন রয়েছে। এগুলো ডাল হিসেবে এবং পবিত্র রমজান মাস সহ অন্যান্য সময় মূক্রচক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ছোলা চাষের উপযুক্ত মাটি নির্বাচনঃ
ছোলা চাষের জন্য উপযুক্ত মাটির দেওয়া ও এঁটেল দোয়াশ মাটিতে ছোলা চাষ করা বেশ উপযোগী।
ছোলার জাত পরিচিতিঃ
বারি ছোলা ২ঃ- গাছের রং সবুজ বীজ স্থানীয় জাতের চেয়েও বড় হয়ে থাকে। হাজার বীজের ওজন ১৪০ থেকে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। বীজের রং হালকা বাদামি এবং বীজে আকার বড় হওয়ায় এ জাতির ছোলা কৃষক ও ক্রেতা কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হয়। ডাল রান্না হওয়ার সমকাল ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট ও আমিসের পরিমাণ রয়েছে ২৩ থেকে ২৭ পারসেন্ট।
এ জাতের ছোলার জীবনকাল ১২০ থেকে ১৩০ দিন পর্যন্ত ধরা হয়। এগুলো প্রতি হেক্টরে ফলন বৃদ্ধি পায় এক থেকে দুই টন এবং এ জাত নিয়ে পড়া বা উইন্ড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন।
আরো পড়ুন,
- হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি | বিঘা প্রতি ভুট্টার ফলন ।
- তেলাপিয়া মাছের মিশ্র চাষ | তেলাপিয়া মাছের বৈশিষ্ট্য | তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা।
- ঈমান সম্পর্কে সাহাবীদের ঘটনা | আমল সম্পর্কে আলোচনা।
- হাইব্রিড মরিচ চাষ পদ্ধতি | উচ্চ ফলনশীল মরিচের জাত | মরিচ চাষের উপযুক্ত সময়।
- বাংলাদেশে কোন ঋতুতে গম চাষ করা হয় | গমের ফলন বৃদ্ধি করার উপায় ।
বারি ছোলা ৩ঃ- এই জাতের গাছ খাড়া প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং রং হাল্কা সবুজ ডগা সতেজ থাকে। বীজের আকার বেশ বড় হয়ে থাকে এবং হাজার দানার নিজের ওজন ১৮৫ থেকে ১৯৫ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। ডাল রান্না হওয়ার সময় কাল 40 থেকে 45 মিনিট।
আমিসের পরিমাণ রয়েছে 23 থেকে 26%। সঠিক সময়ে বললে পারতে সময় লাগে বেশ কয়েকদিন যেমন ১১৫ থেকে ১২৫ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এই জাতটি বিশেষ করে রাজশাহী অঞ্চলে বরেন্দ্র এলাকায় আমাদের জন্য বেশ উপযোগী। এর ফলন হেক্টর প্রতি ১ থেকে ২ টন পর্যন্ত পাওয়া যায়।
বারি ছোলা ৪ঃ- এই জাতের ছোলার গাছ মাঝারি খাড়া এবং পাতা গাড় সবুজ হয়ে থাকে। কান্দে খয়রি রংয়ের ছাপ দেখা যায় এবং বীজের পার্শ্বদিক সামান্য চ্যাপ্টা ত্বক মিশ্রণ। এ জাতের বীজের রং হালকা বাদামী এবং হাজার বীজের দানার ওজন ১৩২ থেকে ১৩৮ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
গাছের উচ্চতা ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয় এবং রান্না হওয়ার সময় কাল ৩২ থেকে ৩৮ মিনিট পর্যন্ত হয়। আমিষের পরিমাণ ১৮ থেকে ২১% এবং জীবনকাল ১২০ থেকে ১২৫ দিন পর্যন্ত হয়।
বারি ছোলা ৫ঃ- এ জাতের বীজের আকার অনেকটাই ছোট রং ধুসর বাদামী এবং হিলাম খুব স্পষ্ট হয়। বীজের পার্সে কিছুটা চ্যাপ্টা ও ত্বক মিশ্রণ এবং হাজার দানার বীজের ওজন ১১০ থেকে ১২০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এবং রান্না করার জন্য এ ডাল এর সময় ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট। এ ডালে, আমি শের পরিমাণ ২০ থেকে ২২ পারসেন্ট।
বারি ছোলা ৬ঃ- এ জাতের বীজের আকার কিছুটা গোলাকৃতি এবং ত্বক মিশ্রণ ও উজ্জ্বল বাদামি হলুদের বর্ণ হয়ে থাকে। বিয আকারে দেশি জাতের চেয়েও বড় এবং হাজার বীজের ওজন ১৫৫ থেকে ১৬৫ গ্রাম পর্যন্ত হয়। এ জাতের ডাল রান্নার সময়কাল ৩২ থেকে ৩৭ মিনিট এবং আমিষের পরিমাণ 19 থেকে 21 শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।এ জাতের ছোলার জীবনকাল ১২৫ থেকে ১৩০ দিন পর্যন্ত ধরা হয়ে থাকে।
ছোলার বীজ বপনঃ
এই জাতীয় ছোলা বীজ ভবন করার জন্য লাইন করে লাগানো যায় এবং লাইনের বপন এর ক্ষেত্রে লাইন থেকে লাইনে দূরত্ব ৪০ সেন্টিমিটার করে লাগালে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। বিজের হাড় ৪০ থেকে ৫০ কেজি হেক্টর প্রতি ছিটিয়ে ভবনের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ কিছুটা বেশি অর্থাৎ ৫০ থেকে ৬০ কেজি প্রতি হেক্টর বললে ভাল ফলাফল আসে।
বাপনের সময় অগ্রহায়ণ ৫ থেকে ২৫ অর্থাৎ ২০ শে নভেম্বর 10 থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য কার্তিক মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ অর্থাৎ অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এ সময়ে মধ্যে বীজ বপন করতে হবে।
সারের পরিমানঃ
ছোলা চাষের জন্য জমিতে শেষ চাষের সময় হেক্টর প্রতি নিম্নরুপ সার প্রয়োগ করতে হবে যা নিচে পরিমাণ সহ কিছু স্যারের নাম উল্লেখ করা হলো:
- ইউরিয়া ৪০ থেকে ৫০ কেজি।
- টিএসপি ৮০ থেকে ৯০ কেজি।
- এমওপি ৩০ থেকে ৪০ কেজি।
- বোরিক এসিড ১০ থেকে ১২ কেজি।
- জৈব সার পাঁচ থেকে ছয় কেজি।
বিশেষ করে শেষ চাষের সময় সমুদয় সার সমূহ প্রয়োগ করতে হবে। অপ্রচলিত এলাকায় আমাদের জন্য সুপারিশ মত নির্দিষ্ট জৈব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রতি কেজি বীজের জন্য ৮০ গ্রাম হারে অণুজীব স্যার প্রয়োগ করতে হবে এবং ইনকুলাম স্যার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে না।
পানির সেট ও আগাছা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
ছোলা ভবনের ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে একবার আগাছা দমন করতে হবে এবং প্রতি বৃষ্টির ফলে জাতি জলবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে ভবনের পর হালকা শিস দিতে হবে।
পোকামাকড় দমন ও ব্যবস্থাপনাঃ
পোকার নামঃ- পড বোরারঃ
ক্ষতির নমুনাঃ- এক জাতীয় পকারক্রিয়া সুখ কিট কচি পাতা ফুল ও ডগা খেয়ে ফেলে ফলে ফল বড় হওয়ার সময় ছিদ্র করে ভেতরের নরম অংশ খেয়ে নেই। একটি ক্রিয়া পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পূর্বে ত্রিশ থেকে ৪০/ টি ফল খেয়ে ফেলতে পারে যা এ রোগ ছোলার উৎপাদন অনেক হাসো পায়।
কিরা ছোট অবস্থায় দাঁত দিয়ে সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে এবং আক্রমণ বেশি হলে ডে-সিস্ট ২.৫ ইসি বারিপ কড সিম্বস ট্রেন এসি বা ফেসন টেন এসি ১ মিলিম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর এক থেকে দুই বার স্প্রে করতে হবে।
রোগ বালাই ব্যবস্থাপনাঃ
পোকার নামঃ- ছোলার ওল্ড বা নুয়ে পড়া রোগ।
ক্ষতির নমুনাঃ- চারা অবস্থায় এই রোগে আক্রান্ত গাছ মারা যায় এবং পাতায় রংয়ের কোনো পরিবর্তন হয় না। পরিপূর্ণ বয়সে গাছ আক্রান্ত হলে পাতা ক্রমণায়ে হলুদের রং ধারণ করে। আক্রান্ত গাছ ঢলে পড়ে যায় এবং শুকিয়ে তামাটে রং ধারণ করে।লম্বালম্বি ভাবে কাটলে কান্ডের মাঝখানের অংশ কালো হয়ে যায়।
রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন বারি ছোলা ৪ এর চাষ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে।
রোগের নামঃ-ছোলার গোড়া পচার রোগ
ক্ষতির নমুনাঃ- চারা গাছে এ রোগ বেশি দেখা যায় এবং আক্রান্ত গাছে হলদে হয়ে শিকড় ও কান্ডের সংযোগস্থলে কালো দাগ পড়ে যায়। এই অবস্থায় আক্রান্ত স্থানে গাছের গোড়ায় ছত্রাকের জালিকা ও সরিষার দানার মত গুটি দেখা যায়।
গোড়া পচা রোগ বালাই দমনঃ
এ রোগের ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। যেমন ভিটা ভিক্স ২০০ প্রতি কেজি বীজের জন্য ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ সধন করে নিতে হবে।
রোগের নামঃ- মোল্ড রোগ।
ক্ষতির নমুনাঃ- সোলার বৃদ্ধি ব্যবস্থাপনা কিংবা ফল আসার শুরুতেই এই রোগ আক্রমণ করে থাকে। এ রোগের লক্ষণ গুলো হল কান্ড, পাতা,ছজছ ফুল ও ফলে প্রকাশ পেয়ে থাকে। আক্রান্ত স্থানের ধূসর রঙের ছত্রাকের উপস্থিত দেখা দিয়ে থাকে।
অনু কূলপরিবেশঃ- জমিতে গাছ বেশি ঘন থাকলে এবং বাতাসের আদ্রতা বেশি থাকলে এ রোগ ব্যাপকতা বৃদ্ধি লাভ করে থাকে।
করণীয়ঃ- ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং ব্যাভিস্টিন অথবা থিরাম প্রতি কেজি ডিজে দুই থেকে তিন গ্রাম বিষ মিশিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
ছোলার ডাল গুজনজাতকরণ ও ভূমিকা
পূর্ণবয়স্ক পোকা ও ক্রীড়া, উভয় গুদামজাত দলের ক্ষতিকর হয়ে থাকে।
ক্ষতির নমুনাঃ- এই পোকা দলের খোসা ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে শ্বাস খেতে খুব ভালবাসে। ফলে ছোলার দানা খুবই হালকা হয়ে যায়। এর ফলে বীজের অঙ্কুরোদ গম নষ্ট হয়ে যায় এবং খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
গুদামজাত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিঃ
ছোলার গুদামজাত করার আগে দানা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ডালের দানা শুকিয়ে পানির পরিমাণ ১২% এর নিচে আনতে হবে এবং বীজের জন্য টোন প্রতি ৩০০ গ্রাম মালাথিয়ন বা সেভেন ১০% গুড়া মিশিয়ে পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। ফস্টক্সিন ট্যাবলেট দুটি বড়ি প্রতি ১০০ কেজির ডালের ব্যবহার করতে হবে। এ বড়ি আবদ্ধ পরিবেশে ব্যবহার করতে হয়।
ফসল সংগ্রহঃ- চৈত্রের প্রথম সপ্তাহ থেকে মধ্যসচিত্র অর্থাৎ মধ্য মার্চের শেষে এই সময়ে ফসল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url