গোল্ডেন ৮ পেয়ারা চাষ | পেয়ারা গাছের রোগ ও প্রতিকার ।
পিয়ারা অত্যন্ত জনপ্রিয় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল। বাংলাদেশের সর্বত্রে কম বেশি এই ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে পেয়ারা বাণিজ্যিক চাষাবাদ পিরোজপুর, চট্টগ্রাম, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, এসব জেলায় কিছু এলাকায় চাষ করা হয়।
বর্তমানে পেয়ারা কতগুলো উন্নত জাত ও নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয় বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষে কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এখন সারা দেশে এই ফলের বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করা হয়। বহুবিধ গুনাগুনের সম্মান এর জন্য চেহারাকে নিরক্ষীয় এলাকায় আপেলও বলা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন,
মুচমুচ করে টাটকা পিয়ারা খাওয়ার মজাই অন্যরকম তাছাড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে জাম জেলি জুস তৈরি করে পেয়ারা খাওয়া যায়। আমাদের দেশে দেশ কয়েকটি উন্নত জাতের পেয়ারা যেমন কাজী পিয়ারা বারি ২ বারি ৩ অর্থাৎ লাল শ্বাস বিশিষ্ট বাউ পেয়ারা ১ থেকে বাও পেয়ারা ৯ পর্যন্ত ইপসা পাওয়া যায়।
পেয়ারা গাছের বৈশিষ্ট্যসমূহ।
পিয়ারা খেতে খুব সুস্বাদু মুচমুচে ও সুমিষ্ট। পেয়ারা কে ভিটামিন সি এবং ব্যাংকও বলা যায়। পেয়ারা গাছ মাঝারি আকারে শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট আকৃতির হয়ে থাকে। শীতের সময় পাতা ঝরে পড়ে বসন্ত শেষের দিকে পিয়ারা লোক গাছে নতুন পাতা ও দাদা চলে আসে। সাধারণত বর্ষা উচিত ঋতুতে গাছের পেয়ারা দেশ খেতে মজা লাগে। তবে সিট অপেক্ষা বর্ষাকালে ফলন একটু বেশি হয়। বর্ষাকালে জলীয়ভাবে বেশি থাকায় ফলের নিশ্চয়তা ও অন্যান্য গুনাগুন শীতকালের ফলের থেকে অনেকটাই কম হয়ে থাকে।
তাছাড়া জলীয়ভাব বেশি থাকায় টাকা ফল তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় যার ফলে দামেও অনেকটা কম পাওয়া যায়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যেসব জাতের পেয়ারা গুণাগুণ শীতকালে বেড়ে যায় রোগ ও উপকার আক্রমণও কম হয়ে থাকে। ফলে আকৃতি এবং রং সবদিক থেকেই সুন্দর হয় এ সময় পেয়ারা দাম অনেকটা কমে থাকে।
এসব দিক বিবেচনা রেখে বর্ষাকাল বাদে কিভাবে অন্যান্য রীতিতে অত্যাধিক হারে উৎপাদন বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে গবেষণা শুরু করা হয়েছে। অত্যন্ত আসার কথা যে গবেষণা আজ এ ব্যাপারে সমর্থক দিয়েছে পেয়ারা গাছের অসময় ফল ধরন এখন খুব সহজ এবং সম্ভব হয়।
অসময়ে ফল ধারণের পদ্ধতি ।
বর্তমানে পেয়ারা গাছে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের জন্য কৃষি বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েকটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। সেগুলো হল শিকড় মুক্তকরণ পদ্ধতি হরমোন জাতীয় পদার্থ প্রয়োগ পদ্ধতি ও শাখা প্রশাখা বাঁকানো পদ্ধতি।
শিকড় উন্মুক্তকরণ পদ্ধতি।
পেয়ারা গাছের গোড়ায় মাটি তুলে বা আলগা করে দিতে হবে। মাটি তুলে গাছের শিকড় গুলো বের করে নাড়াচাড়া দিতে হবে। গাছের গোড়া থেকে এক থেকে দেড় মিটার অর্থাৎ পিয়ারা গাছের ক্যানভী পর্যন্ত মাটি কোদাল শাবল বাণী দ্বারা খুব ভালোভাবে সাবধানতার সাথে মাটির মুক্ত করে দিতে হবে। মাটি তুলে দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে গাছের শিকড় গুলো যাতে কেটে না যায়।
বিশেষ করে গাছের আসল মূল কাটা ও উৎপাদন করা যাবে না। সাধারণত যে কোন বয়সে পেয়ারা গাছে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়।গাছের গোড়ার মাটি মুক্ত করার কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর পরিচয় যা করতে হবে। পরিচর্যা কালে পরিমাণ মতো স্যার ও সেক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
এই পদ্ধতিতে গাছের পাতা লাল হয়ে ঝরে যেতে পারে। আমাদের দেশে এপ্রিল থেকে মে মাসের পেয়ারা গাছের শিকড় মুক্ত করতে হয় এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে পেয়ারা গাছের ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসের ফল ধারণ করে থাকে।
হরমোন জাতীয় পদার্থ প্রয়োগ পদ্ধতি।
সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছর বিশিষ্ট পেয়ারা গাছে হরমোন প্রয়োগ করতে হবে। এই সময়ে হরমোন জাতীয় পদার্থ হিসেবে ২,৪ ডি ন্যাপথালিন অ্যাসিটিক অ্যাসিড এম এ এ ১০% ইউরিয়া দ্রবণ এবং রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা যেতে পারে। স্প্রে মেশিন বা ফুট বাম দিয়ে ভালোভাবে পেয়ারা গাছের পাতা ভিজিয়ে দিতে হবে। কয়েকদিনের মধ্যে গাছের পাতা লালচে ঝরে যেতে পারে এবং পরবর্তীতে গাছের সঠিক পরিচর্যা নিলে নতুন পাতা জন্মে।
শাখা প্রশাখা বাঁকানো পদ্ধতি।
পেয়ারা গাছের শাখা প্রশাখা বাকানো পদ্ধতি সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তি এই পদ্ধতিতে পেয়ারার ডাল বাকালে প্রায় ১০ গুন বেশি ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া এই প্রযুক্তিতে বছরে বারোমাসি ফল ধরানো সম্ভব হয় এবং ফলের মৌসুমে গাছের ফুল ছিড়ে গিয়ে এ প্রক্রিয়ায় আরো প্রবাহিত করা যায়। যার ফলে সারা বছরই ফলের মৌসুমের তুলনায় কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গুণ ফল ধরবে।
এই লক্ষ্যে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গবেষণার মাধ্যমে গাছের ডাল বাঁকানো পদ্ধতি উদ্বোধন করা হয়েছে। বছরে দুইবার অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে এবং হেমন্তকালে শাখা প্রশাখার নিয়ন্ত্রিত বিনাশের মাধ্যমে সারা বছর পেয়ারাফুল ও ফল ধারণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে থাকে। গাছের বয়স দেড় থেকে দুই বছর হলে এই পদ্ধতি শুরু করা যাবে। এবং পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত এ পদ্ধতি ফলন বাড়ানো সম্ভব।
ডাল বাঁকানোর ১০ থেকে ১৫ দিন আগে গাছের গোড়ায় সার ও পানি দিতে হবে। প্রায় এর থেকে দেড় ফুট অঞ্চলে পাতা ও ফুল ফল রেখে বাকি অংশ ছেঁটে দিতে হবে। কাছাকাছি করে সাথে অথবা মাটির মাধ্যমে মাটিতে বেধে দিতে হবে। গ্রীষ্মকালে মাত্র ১০ থেকে ১২ দিন পরেই নতুন ডাল গজানো শুরু হয়ে যাবে।
নতুন ডাল ১ সেন্টিমিটার লম্বা হলে বাঁধন খুলে দেওয়ায় ভালো। হেমন্তকালে নতুন ডাল গড়াতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। ডাল বাঁকানোর ৩৫ থেকে সাত দিন পরে ফুল ধরা শুরু হয়ে যায়। এভাবে গজালো প্রায় প্রতি পাতার কলি ফুল আছে এবং এ পদ্ধতিতে সারা বছরই ফলন পাওয়া যায়।
বিশেষ ব্যবস্থাপনা।
পিয়ারা গাছের আকার আকৃতি কাঠামো ও গুণগত মানের ফল ধরনের জন্য গাছের বিশেষ কতগুলো ব্যবস্থাপনা করা হয়ে থাকে। এই ব্যবস্থাপনা গুলোর মধ্যে দেওয়া ফুল ছেড়ে দেওয়া উৎফল পাতলা করুন ফল ঢেকে দেওয়া এসব পদ্ধতি গুলো ই বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়। অঙ্গ ছাটাই প্রক্রিয়াকরণ গাছের মরা শুকনা চিকন লিখলি কে রোগাকান্ত ও প্রয়োজনীয় হীন ডালপালা ছাটাই করাকে অঙ্গ ছাটাই করন বলা হয়।
রোপনকৃত চারা বা কলমের আকার আকৃতি ও কাঠামোর সুন্দর করার উদ্দেশ্যে মাটি থেকে এক থেকে দেড় লিটার উপরে বিভিন্ন দিক কে ছড়ানো চার থেকে পাঁচটি ডাল রেখে ঘোড়ার দিকে সব ডাল ছটায় করে দিতে হবে। বয়স্ক গাছের ফল সংগ্রহের পর সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে অঙ্গ ছাটাই করা যেতে পারে। এতে গাছের নতুন ডালপালা গজায় প্রচুর ফুল হয় এবং গুণমানের উৎকৃষ্ট ফল ধারণ করে থাকে।
ডাল নুয়ে দেওয়া প্রক্রিয়াকরণ।
পেয়ারা গাছের খাড়া ডালে সাধারণত ফুল ও ফল খুবই কম হয়ে থাকে। তাই খাড়া ডালগুলোকে যদি ওজন বা টানার সাহায্যে নয়নে দিলে প্রচুর পরিমাণে নতুন শাখা প্রশাখা গজাবে। এবং নতুন ডালপালায় গুণগত মানের ফল ধারণ ও ফলন বৃদ্ধি পাবে।
ফল ও ফুল পাতলা করুন।
কাজী পেয়ারা ও বারি পেয়ারা ২ এর গাছের প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যার ফুল ও ফল আসে। ফল আকারে বড় হওয়ায় গাছের পক্ষে সব ফল ধারণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে এই ফলের ভারে ডালপালা ভেঙে যায় এবং ফল আকারে ছোট ও নিম্নমানের হয়ে থাকে। কি অবস্থায় গাছকে দীর্ঘদিন লাভবান বা ফলবান ডাকতে এই মানসম্পন্ন ফল পেতে হলে প্রথমে কিছু ফুল এবং পরে ফল ছোট আকার অবস্থায়।
অর্থাৎ মার্বেল অবস্থায় ৫০ থেকে ৬০% ফল পাতলা করে দেওয়াই উত্তম পদ্ধতি বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। কলমের গাছে ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই প্রথম বছরে ফুল অথবা ফল নেওয়া উচিত হবে না। তাই ফুল আসার সাথে সাথে ছিঁড়ে ফেলে দেওয়ায় উত্তম পদ্ধতি বলে বিবেচনা করা হয়।
এবং দ্বিতীয় বছর অল্প পরিমাণ ফল নেওয়া ভালো।এভাবে গাছের বয়স ও অবস্থা বুঝে ফল রাখতে হবে যাতে পরিকল্পিত উপায়ে ফুল ও ফল পাতলা করে প্রায় সারা বছর কাজী পেয়ারা এই জাতীয় গাছের ফল পাওয়া যায়।
ফ্রুট ব্যাগিং বা ফল ঢেকে দেওয়া পদ্ধতি।
পেয়ারা ছোট অবস্থাতে ব্যাগিং করলে রোগ বালায়, পোকামাকড়, পাখি, বাদুর, কাঠবিড়াল এসব থেকে সহজে রক্ষা করা যাবে। ব্যাগিং করা হলে অপেক্ষাকৃত বড় আকারে এবং আকর্ষণীয় রংয়ের হয়ে থাকে। ব্যাগিং বাদামী কাগজের বা ছোট ছিদ্রযুক্ত পলিথিন দিয়ে করা যেতে পারে। ব্যাগিং করলে সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রাশি থেকে প্রবাহিত হয় বিধায় কোষ বিভাজন বেশি এবং ফল আকারে বড় হয়।
ব্যাগিং করার আগে অবশ্যই প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ০.৫ মিলি হারের টিল্ট ২৫০ সিসি নিচে সব ফল ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করে নিতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে পেয়ারার উৎপাদন মাত্র ১ লক্ষ ৬১ হাজার টন। বাংলাদেশের আবহাওয়া জলবায়ু মাটি এসব পেয়ারা চাষের জন্য খুবই উপযোগী তাছাড়া অসময়ে ফল ধরনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগুলো গবেষণা উদ্বোধন করা হয়েছে।
বিশেষ ব্যবস্থাপনার সমূহের মাধ্যমে সহজে পেয়ারা চাষে আর্থিক লাভবান করা সম্ভব তাই পরিকল্পিত উপায়ে প্রযুক্তির ভিত্তিক পেয়ারা চাষের প্রতি কৃষক ভাইদের উদ্ভূত ও বাস্তবায়ন করার জন্য গবেষক বিজ্ঞানী সম্প্রসারণ কৃষি কর্মী সর্বোপরি সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করার হয়েছে।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url