গলদা চিংড়ি চাষের আধুনিক পদ্ধতি | বাগদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম।
গলদা চিংড়ি বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সাধু পানির দ্রুত বর্ধনশীল চিংড়ির মধ্যে গলদা চিংড়ি অতি পরিচিত বলে ধারণ করা হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশে গলদা চিংড়ি সুস্বাদু পানি এবং ইসৎ লবণাক্ত পানিতে পাওয়া যায়। তবে নদীর উঁচু অংশে যেখানে জোয়ার ভাটার তারতম্য বেশি সেখানে এরা অবস্থান করতে বেশি পছন্দ করে।
গলদা চিংড়ি প্রাকৃতিক পরিবেশে বাংলাদেশ-ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পিলিফাইন, ইত্যাদি দেশে পাওয়া যায়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং আধা গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশ সমূহের সাধু পানিতে এই গলদা চিংড়ি বিশেষ করে পাওয়া যায়। সাধু পানের চিংড়িকে পর্ন বলা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন,
- উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজ চাষ | বিঘা প্রতি পেঁয়াজের ফলন।
- তেলাপিয়া মাছের মিশ্র চাষ | তেলাপিয়া মাছের বৈশিষ্ট্য | তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা।
- পুকুরে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি | শিং মাছের রোগ ও প্রতিকার|
- শীতকালীন পুঁইশাক চাষ | পুইশাকের পুষ্টিগুণ | পুইশাকের উপকারিতা ও অপকারিতা।
- রুই কাতলা মাছ চাষ পদ্ধতি | কোন মাছ চাষে লাভ বেশি।
গলদা চিংড়ি বিশ্বে gaint face, water pround. নামে বেশি পরিচিত। গলদা চিংড়ি অমেরুদন্ডী, শীতল রক্ত বিশিষ্ট, খরসে আবৃত নিশাচর সর্বভুক প্রাণী। খোলস পরিবর্তনের মাধ্যমে দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে। পতনশীল জৈব পদার্থ, প্রাণী, উদ্ভিদ কণা প্রভৃতি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।
লার্ভা বা রেনু অবস্থায় এরা প্লাংটন ভোজি এবং বাচ্চা বা কিশোর অবস্থায় পানির তলদেশের উদ্ভি দ ও প্রাণিজ খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। পুরুষ গলদা স্ত্রী গলদার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড় হয় এবং দ্রুত বর্ধনশীল। এরা স্বজাতি ভোজী এবং খোলস পরিবর্তনের সময় নরম চিংড়িকে সুযোগ পেলে খেয়ে ফেলে।
গলদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়মগলদা চিংড়ি দ্রুত বর্ধনশীল এবং সুস্বাদু, কাঁটাবিহীন, সহজে রান্না করা যায়। সাধু পানিতে এবং অল্প লবণাক্ত পানিতে বিশেষ করে পাঁচ পিপিটির কম চাষ করা হয়ে থাকে বা চাষ করা যায়। বাংলাদেশের সর্বত্রে চিংড়ি চাষের সুযোগ রয়েছে। একক ও মিশ্র চাষ বিশেষ করে কার জাতীয় মাছ যেমন রুইকাতুল মৃগেল ইত্যাদি মাছের সাথে চাষ করা যায়। প্রাকৃতিক উৎস ও হ্যাচারিতে উৎপাদিত রেণুপনা বা পি এল পাওয়া যায়। সর্বভুক প্রাণী খাদ্য হিসেবে সহজে সম্পূর ক খাদ্য প্রয়োগ করা যায়।
সম্পূরক খাদ্য তৈরীর উপাদান সহজে সংগ্রহ করা যায় বিধায় বাজার মূল্য চাহিদা বেশি এবং সহজে বিক্রয় যোগ্য বলে বিবেচিত করা হয়। রোগ বালাই কম এবং চিকিৎসাও করা যায়।
ভেনামি চিংড়ি চাষ পদ্ধতিঃ
আমাদের দেশে গলদা চিংড়ি সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে চাষিরা চাষ করে থাকেন নিচে তা বিশেষ করে পদ্ধতিগুলো উল্লেখ করা হলো:
একক চাস পদ্ধতিঃ শুধুমাত্র গলদা চিংড়ির চাষ একক চাষ যা একক চাষ পদ্ধতিতে প্রতি এ করে ৬০০০ থেকে ১০০০০ টি গলদা রেলওপনা মজুদ করা হয়। উৎপাদন প্রতি একরে ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি হয়ে থাকে।
দ্বিতীয় মিশ্র চাষ পদ্ধতিঃ গলদা চিংড়ি সাথে রুই কাতল মৃগেল জাতীয় মাছের চাষ করা হয়। মিশ্র চাষ পদ্ধতিতে প্রতি এ করে দুই হাজার থেকে চার হাজারটি গলার চিংড়ি রেনু এবং ২০০০ থেকে ৫ হাজারটি কার জাতীয় মাছের পোনা মজুদ করা যেতে পারে। উৎপাদন প্রতি একরে চিংড়ি ২০০ থেকে ৩০০ কেজি এবং কাপ জাতীয় মাছ দুই হাজার থেকে ২৫০০ কেজি হয়ে থাকে।
আমাদের দেশে আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ উৎপাদন কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি উৎপাদন প্রতি এ করে 1200 থেকে 2500 কেজি হয়ে থাকে। আমাদের দেশে গলদা চিংড়ির আধুনিক চাষ গুটি কয়েকজন চাষী ছাড়া ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়নি।
আধুনিক চাষের জন্য পুকুর এর সাথে একটি নার্সারি পুকুরে থাকা অত্যাবশক। নার্সারি বা পুকুরের আয়তন চাষ পুকুরে ২০ শতাংশ হওয়া ভালো এবং চাষ পুকুর এক ক এ করে ১০০ শতাংশ হওয়া ভালো। চাঁসপুকুর এক একর ১২ শতাংশ হলে নার্সারি পুকুরের আয়তন হবে ২০ শতক।
নার্সারি পুকুরটির পার শক্ত মজবুত দূর ভাবে মেরামত করতে হবে। পুকুরটির পানির গভীরতা থাকতে হবে চার থেকে পাঁচ ফুট এবং তলা সমতর হতে হবে।
পুকুরটির পাড়ের উপরের অংশ নেট দিয়ে ঘিরে দিতে হবে কেননা নেট দিয়ে ঘিরে দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে বাইরে থেকে সাপ ব্যাঙ কাঁকড়া কুঁচে নার্সারি পুকুরের ভিতরে প্রবেশ করে রেনুপনা খেতে না পারে। এছাড়া পুকুরের উপর দিয়ে বাস বা রুচি ফিতা ঘনঘন করে টেনে দেওয়া হয় যেন পাখি পুকুরে নামতে না পারে। এর ফলে রেনুপার বাচ্চা র হাড় বৃদ্ধি পায় এবং রোগ জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জীব নিরাপত্তা বা যবনিরপত্তা এবং বায়ো সিকিউরিটি বলা হয়।
গলদা চিংড়ির রেনুপনা প্রাপ্তিঃ
আমাদের দেশে প্রাকৃতিক উৎস নদী এবং সাগরের মোহনা থেকে গলদারেনু পাওয়া যায়। এছাড়া হ্যাচারিতে উৎপাদিত বালার রেনু পাওয়া যায় বলে ধারণা করা হয়। বছরে শুরুতে চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসে অর্থাৎ মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে প্রথম রেনু পাওয়া যায়। বছরের শেষদিকে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গলদা রেনু পাওয়া যায়।
রেনুপনা মজুদ করণঃ
রেনুপনা মজুদ করনের ক্ষেত্রে প্রথমবার বছরের শুরুতে রেনু উপন্যাস সংগ্রহ করে নার্সারি পুকুরে মজুদ করা হয়। প্রতি শতকে ১০০০ টি পোনা নার্সারিতে মজুদ করা যেতে পারে। নার্সারিতে রেনু পোনা ৬০ থেকে ৭৫ দিন লালনের পর কিশোর গলদা চিংড়ি র স্ত্রী পুরুষ বাছাই করা যায়।
চাঁস পুকুরে শুধু পুরুষ কিশোর চিংড়ি মজুদ করা হয় কারণ পুরুষ শ্রেণীর বৃদ্ধি বেশি এবং দ্রুত হয়। কিশোর স্ত্রী চিংড়ির পৃথকভাবে একক চাষ করলে উৎপাদন মোটামুটি ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে চাচির আরও পুকুর প্রয়োজন হয় তা না হলে চাষী চাষ করে বেশি লাভবান হতে পারবে না। নার্সারি পুকুর হতে প্রথমবার কিছু চিংড়ি আহরণ করে চাসপুকুরে মজিদের পর পুনরায় নার্সারি পুকুরটি প্রস্তুত করতে হবে।
অতঃপর পুনরায় দ্বিতীয়বার রেনুকোনা মজুদ করে রাখতে হবে। এক একর বা ১০০ শতক চাষ পুকুরে কিশোর পুরুষ চিংড়ি মজুদের জন্য নার্সারিতে ২০০০০ টি রেনুপনা মজুদ করা হয়। নার্সারি পুকুরে রেনুপনা বাঁচার হার শতকরা 80% হয়ে থাকে। মজুদকৃত রেনুকোনার শতকরা 40% পুরুষ গলদা চিংড়ি পাওয়া যায়।
নার্সারি পুকুরে ২০,০০০ টি রেলওপনা মজুদ করলে বাঁচার আর ৮০% হিসাবে ১৬ হাজারটি কিশোর চিংড়ি পাওয়া যাবে যেখানে ৬৪০০টি পুরুষ চিংড়ি পাওয়া যাবে। চার্জকৃত পুকুরে এক একর অর্থাৎ ১০০ শতকে পঞ্চাশ হাজারটি পুরুষ কিছু চিংড়ি মজুত করা হয়।
সংস্কৃত পুকুরে পুরুষ বা গলদা চিংড়ি মজুদঃ
জুন জুলাই মাসে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম ওজনের পাঁচ হাজারটি পুরুষ কি সব চিংড়ি মজুত করা হয়। নভেম্বর মাস হতে অধিকাংশ আহরণ শুরু হয় এবং ডিসেম্বর মাসে আহরণ শেষ করা হয়ে থাকে।
জানুয়ারি মাসে চাষ দিয়ে প্রস্তুত করা হয় এবং ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ পুনরায় নার্সারি হতে দ্বিতীয় বার মজুদ রেনুপনা পুরুষ কিছু চিংড়ি ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম ওজনের আহরণ করে মজুদ করা হয়। পুনরায় জুন মাসে চিংড়ি আহরণ করা হয় ফলে চাষ পুকুরে মজুত কিছু চিংড়ি বাচার হার শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ পার্সেন্ট হয়ে থাকে।
কোন চিংড়ির বৃদ্ধি কম হলে পরবর্তী সময়ে আহরণের জন্য রেখে দেওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে বছরে দুইবার চাষের ফলে প্রতি এ করে এক হাজার থেকে এক হাজার দুইশ কেজি চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব হয়ে থাকে।
নার্সারি পুকুরে বাপ চাষকৃত পুকুরে কাপ জাতীয় পোনা মজুদঃ
পানির গুণাবলীর সাম্যবস্থা বজায় ও প্লান্টন সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য প্রতি এ করে ৭০০ থেকে ১০০০ টি বড় আকৃতির যেমন ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ওজনের সিলভার কাপ এর পোনা মজুদ করা যেতে পারে। বছরের শেষে প্রতিটি মাসের ওজন এক থেকে দুই কেজি হয়ে থাকে। প্রতি একরে ৬০০ থেকে ৭৫০ কেজি মাছ উৎপাদন করা যায়।
নার্সারি এবং চাষকৃত পুকুর প্রস্তুতকরণঃ
নার্সারি ও চাষকৃতপুকুর নিয়ম মোতাবেক শেষ দিয়ে শুকিয়ে চলার পচা কাদামাটি তুলে ফেলা এবং মাটিতে চুন সার প্রয়োগ করা অত্যন্ত অত্যাবশক। অতঃপর ঘন পাশের নেট দিয়ে পানি ছেঁকে প্রবেশ করানো প্রয়োজনীয়। পানির গভীরতা নার্সারির পুকুরে পানির গভীরতা ১.২৯৫ মিটার এবং চাষকৃত কুকুরের পানির গভীরতা এক থেকে দুই মিটার হলে খুব ভালো হয়।
গলদা চিংড়ি স্বজাতি ভোজী এবং খোলস পরিবর্তনের সময় নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য গাছের ডাল বাঁশের কঞ্চি ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার করে। পুরুষ গলদা চিংড়ি পা আকারে বড় হয় এবং অন্য চিংড়িকে সাঁড়াশি বা সিমটা দ্বারা আক্রমণ করে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলতে পারে। প্রতি ১৫ দিন পর চিংড়ি পুকুরে ঘিরে জাল টেনে পা ভেঙ্গে দিতে হবে এবং পা ভেঙে দেওয়ার ফলে অন্য সিউড়ি আক্রান্ত বা খাওয়া থেকে রক্ষা পায়। যা চিংড়ির বৃদ্ধি বেশি হয়ে থাকে। পানাড়ানোর জন্য দেহে ১৫ থেকে ২০% শক্তি ব্যয় করে থাকে।
গলদা চিংড়ির রোগ বালায়ঃ
গলদা চিংড়ি পুকুরের পরিবেশে ঠিক থাকলেও কোন রোগ বালাই হয় না। পরিবেশ নষ্ট হলে বিষাক্ত গ্যাসের কারণে চিংড়ি মাছ মারা যেতে পারে। এছাড়া এন্টেনা কাটা ভাঙ্গা লেজ পচা গায়ের সিওলা হওয়া মাথায় পানি জমা মাথায় কিরমি হওয়া রোগ দেখা যায়। এসব রোগের সঠিক চিকিৎসা করা হলে চিংড়ি সুস্থ হয়ে যায়।
গলদা চিংড়ির উপাদানঃ
বর্তমান সময়ে গলদা চিংড়ি উৎপাদনে বছরে ২০০ থেকে ৩০০ কেজি প্রতি এ করে পাওয়া যায়। গলদা চিংড়ি এবং মাছ উৎপাদন করে চাষিরা প্রতি এ করে দুই লক্ষ থেকে 8 লক্ষ টাকা লাভ করে থাকেন। আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষে প্রতি এ করে এক হাজার থেকে ১২০০ কেজি চিংড়ি এবং উপজাত হিসেবে 750 থেকে 1000 কেজি মাছ উৎপাদন করা যায়।
প্রতি কেজি গলদা চিংড়ি উৎপাদনে ব্যয় হয়ে থাকে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ করে সহজে প্রতি এ করে চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা লাভ করা যায় যা সর্বত্রগোদা চুরি চাষের সুযোগ রয়েছে বলে ধারণা করা যায়।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url