আধুনিক পদ্ধতিতে রসুন চাষ | রসুন চাষের উপযুক্ত সময়।
আসসালামু আলাইকুম সম্মানিত, চাষি ভাইয়েরা আজকে আমি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো রসুন চাষ পদ্ধতি।অর্থাৎ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কিভাবে রসুন চাষ করলে লাভবান হওয়া যায় তা এই পোষ্টের মাধ্যমেই তুলে ধরা হলো। আপনারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পোস্টটি পড়লে বুঝতে পারবেন কি ভাবে রসুন চাষে সফলতা অর্জন করা যায়।
সম্মানিত চাষি ভায়েরা, আজকাল রসুন প্রতেকটি রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। শুধু রান্না ছাড়াও বিভিন্ন রেসিপি তৈয়রিতে রসুন ব্যপক ব্যবহার করা হয়। যেমন, বলতে গেলে রসুনে চপ, রসুন রেসিপি ইত্যাদি। চলুন রসুনকিভাবেচাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া যায়।
আরো পড়ুন,
- উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজ চাষ | বিঘা প্রতি পেঁয়াজের ফলন।
- তেলাপিয়া মাছের মিশ্র চাষ | তেলাপিয়া মাছের বৈশিষ্ট্য | তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা।
- শীতকালীন পুঁইশাক চাষ | পুইশাকের পুষ্টিগুণ | পুইশাকের উপকারিতা ও অপকারিতা।
- গবাদি পশু পালন পদ্ধতি ও জাত নির্বাচন | কম খরচে গরু মোটাতাজাকরণ।
- পাকা পেঁপে খেলে কি হয় । পাকা পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।
রসুনের পুষ্টিমূল্য নির্ধানঃ
রসুনে আমিষ প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও সামান্য ভিটামিন সি থাকে বলে ধারণা করা হয় বা পরীক্ষা করে পাওয়া গেছে।
রসুনের ভেষজ গুণাবলীঃ
- রসুন আসুক উপশম হিসেবে কাজ করে।
- শ্বাস কষ্ট মহা ওষুধ হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- হজম শক্তিতে বিশেষভাবে সহায়তা প্রদান করে।
- শ্বাসনালীর মিউকাস বের করতে সহায়তা করে।
- অ্যাজমা রোগের উপশম হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- হাইপার টেনসন রোগে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- স্নায়ুতন্ত্র যেমন চুল পাকানো অল্প বয়স থেকে কমিয়ে থাকে।
- মানুষের শরীরে কোলেস্টরেল লেভেল এর মাত্রা কমিয়ে দেয়।
ব্যবহার ও বিধিমালাঃ
মসলা হিসেবে রসুন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাছাড়া বিভিন্ন আচার ও মুখো চোখ খাবার তৈরিতে রসুনের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
রসুন চাষে উপযুক্ত মাটি তৈরিঃ
রসুন চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি হচ্ছে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ ও সহজে বুড়া হয় এমন মাটি রসুনের জন্য বেশ উপযোগ।
রসুনের জাত পরিচিতিঃ
বাংলাদেশ বা অন্যান্য দেশেই রসুনের কোন জাত নেই বললেই চলে। স্থানীয় জাতেরই রসুন বেশিরভাগ চাষ করা হয়।
রসুলের চারা তৈরিতে ভূমিকাঃ
রসুন চারা তৈরি জন্য বীজ বপনঃ শুকনো রসুনের শাডরিগুলো এক এক করে ছড়িয়ে কুয়া লাগানো হয়। ১৫ সেন্টিমিটার দূরুতে শারি পরে ১০ সেন্টিমিটার দূরে তিন থেকে চার সেন্টিমিটার গভীরে রসূলের কুয়া লাগানো হয়ে থাকে। প্রতি হেক্টরে ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি, রসুনের বীজ প্রয়োজন হয়।
রসুন চাষে সার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিঃ
রসুন চাষে রসুনের হেক্টর প্রতি স্যারের পরিমাণ হলো গোবর 10 টন, ইউরিয়া ২০০ কেজি, টিএসপি 125 কেজি, এমওপি ১০০ কেজি, জিংক সালফেট ২০ কেজি, বোরাক্স ১০ কেজি, জিপসাম ১০০ কেজি। জমির তৈরীর সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি, জিংক সালফেট, বোরাক ও জিপসাম মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। রসুন লাগানোর ৩০ দিন ও ৬০ দিন পর যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তিতে উপরে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবারে প্রতি হেক্টরে ১০০ কেজি ইউরিয়া, ৫০ কেজি এমওপি স্যার প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ
মাটিতে রসের অভাব থাকলে মাঝে মাঝে শেষ দিতে হবে। প্রতিবার সেচ দেওয়ার পর মাটির নিড়ানি দিয়ে কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে দিতে হবে এবং আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে।
রসুনের পোকা এবং পোকার নামঃ
রসুনের পোকার নাম হচ্ছে থ্রি পার্স। থ্রি পস ছোট আকারে পোকা বলে সহজে নজরে আসে না কিন্তু পাতার রস চুষে খায় বলে অধিক আক্রমণে পাতা শুকিয়ে গাছ মরে যায় এবং ফলন কমে যায়।
পোকা চেনার উপায়ঃ
স্ত্রী পোকা স্বর্ণ হলুদাভ। পুরুষ পোকা গারো বাদামি হয়ে থাকে। বাচ্চা পোকা হলুদ অথবা সাদা উভয় হতে পারে এবং এদের পিঠের উপর লম্বা লম্বা দাগ দেখা যায়।
ক্ষতির নমুনাঃ- রসুনের রস চুষে খায় বলে পাতা রুপালি এবং ক্ষুদ্রাকৃতির বাদামের দাগ ও ফোঁটা দাগ দেখা যায়। আক্রমণ বেশি হলে পাতা শুকিয়ে মরে যায়, ও গন্ধ আকারে ছোট বিকৃতি হয়ে যায়। অনুকূল পরিবেশে বিকল্প প্রকার উপস্থিতি দেখা যায়।
জীবন চক্রেঃ
স্ত্রী পোকা পাতার কোষের মধ্যে ৩৫ থেকে ৫০টি ডিম পাড়ে এবং ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ডিম হতে বাচ্চা বের হয়ে যায়। নিষ্ফল ১৫ থেকে ৩০ দিনে দুটি ধাপ অতিক্রম করে এবং প্রথম ধাপে খাদ্য গ্রহণ করে ও দ্বিতীয় ধাপে খাদ্য গ্রহণ না করে মাটিতে ঝরে পড়ে। এরা বছরে ৮ বার বংশবিস্তার করে থাকে এবং স্ত্রী পোকা পুরস্কার সাথে মিলন ছাড়াই বাচ্চাদের সক্ষম হয়ে থাকে।
ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিঃ
সাদা রংয়ের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করে ই মাকড়সার সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং পোকা দমন করা যায়। অনুমোদিত কীটনাশক নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করা যেতে পারে।
রোগ ও ব্যবস্থাপনাঃ
ব্লাস্ট এর রোগ পেঁয়াজের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে যে কোন বয়সের গাছের পাতা ও কান্ড আক্রান্ত হয়ে অধিক আক্রমনের পেঁয়াজের ফুল আসা না আসা থেকে ফস ল কমের ফেলে।
রোগের কারণঃ- আলটার নারিয়া পরি ও স্ট্যামফাইলিয়াম বটায়ওসাম নামক ছত্রাক দায় দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
ক্ষতির নমুনাঃ- কাণ্ডে প্রথমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি ভেজা হালকা ও বেগুনো রঙের দাগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। বৃদ্ধি পেয়ে বড় দাগে পরিণত হয় এবং আক্রান্ত স্থান খড়ের মতো শুকিয়ে যেতে পারে। আক্রান্ত পাতা ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে থেকে মরতে মরতে নিচের দিকে বৃদ্ধি পায়। পাতাও কান্ডের গোড়ায় আক্রান্ত স্থানের দাগ বৃদ্ধি পেয়ে হঠাৎ পাতা ও বীজ বাহি কান্ড ভেঙে পড়ে এতে বীজ ও অপুষ্ট হয় এবং ফলনও কম হয়ে থাকে।
অনুকূল পরিবেশঃ- বৃষ্টিপাত হলে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং আক্রান্ত বীজ ও গাছের পরিত্যক্ত অংশ বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে থাকে।
রূপবানের নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনাঃ
- এ রোগের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরো ধ বাহী বাউন্সিল জাত ব্যবহার করা।
- রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা।
- ফসল পর্যায় অনুসরণ করা অর্থাৎ একই জমিতে পরপর কমপক্ষে তিন থেকে চার বছর ফসল উৎপাদন না করা।
- রসুনের গাছের পরিত্যক্ত অংশ আগাছা ধ্বংস করা।
- অনুমোদিত ছত্রাক নাশক নির্ধারিত মাত্রায় যোগ করা।
কাণ্ড পচা রোগঃ- স্লেকোরোরেশিয়াম রলফোসি ও ফিউজারিয়াম নামক ছত্রাক দ্বারা এই রোগ বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
রোগ নিয়ন্ত্রণে করণীয়ঃ
- যেকোনো বয়সে গাছ এ রোগ আক্রান্ত হতে পারে।
- কাণ্ড ও সিকড়ে এর আক্রমণ দেখা যায় এবং আক্রান্ত কান্ড পচন। ধরে।
- আক্রান্ত কান্ড গুদামজাত করে বেশিদিন রাখা যায় না।
- টান দিলে আক্রান্ত গাছ খুব সহজে মাটি থেকে কান্ড সহ উঠে চলে আসে।
- আক্রান্ত স্থানে সাদা সাদা ছত্রাক এবং বাদামী বর্ণের গোলাকার ছত্রাক গুটিকা দেখা যায়।
অনুকূল পরিবেশঃ- অধিক তাপ ও আদ্রতা পূর্ণ মাটিতে এর রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে সেক্ষেত্রে শেচ দিলেও এরো বৃদ্ধি পায়। এ রোগের জীবাণু মাটিতে বসবাস করে বিধায় সেচের পানির মাধ্যমে ও মাটিতে আন্ত পরিচর্যা সময় কাজে হাতিয়ারের মাধ্যমেও এ রোগ বিস্তার করতে পারে।
রোগ নির্ণয় ও ব্যবস্থাপনাঃ
- মাটি সব সময় সাথে রাখা যাবে না সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
- আক্রান্ত জমিতে প্রতিবছর রসূল পেঁয়াজ বারবার করা যাবে না।
- অনুমোদিত ছত্রাক নাশক নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করে এরো নির্ণয় করা যেতে পারে।
- আক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংস করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনাঃ
রসুন বা পিয়াজ সংগ্রহের সময় রসুন গাছের পাতা শুকিয়ে বাদামী রং ধারণ না করা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে না। অর্থাৎ রসুনের পাতা বা কান্ড শুকিয়ে বাদামী রং ধারণ করলে বা ঢলে পড়লে তখন রসুন তোলা উপযোগী হয়। গাছসহ রসুন তোলা হয় এবং ওইভাবে ছায়াযুক্ত স্থানে শুকিয়ে মরা পাতা কেটে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতি হেক্টরে ১০ থেকে ১২ টন ফলন পাওয়া যায়।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url