আলু চাষের উপযুক্ত সময় | আলুর রোগ ও প্রতিকার।
আমরা যেমন মাছে ভাতে বাঙালি, তেমনি একপ্রকার বলতে গেলে, আলু ভাবতেও বাঙালি। কারণ প্রতিটি খাবারের মেনুতে আলু থাকতেই হবে। আলু ছাড়া যেন খাবারটাই অসম্পূর্ণ হয়ে থাকে।আলু চাষে সফলতা পেতে হলে অবশ্যই জমি তৈরি থেকে শুরু করে সংরক্ষণ পর্যন্ত জানতে হবে। মাঠে দেখা যায় কেউ আলু চাষ করে অনেক বেশি মুনাফা অর্জন করছেন কেউবা ক্ষতির মুখে পরছেন।
তাই আলু নিয়ে আজকে আপনাদের মাঝে, আমি কিছু কথা শেয়ার করতে যাচ্ছি। আলুর বিভিন্ন রোগ - বালাই থেকে শুরু করে, সম্পূর্ণ সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
পোষ্ট আলোচ্য সুচিঃ
- আগাম আলু চাষের সময়।
- জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধান।
- বিভিন্ন ধরনের মাটির বৈশিষ্ট্য।
- আলু চাষের জমি তৈরি।
- আলু চাষে কীটনাশক।
আগাম আলু চাষের সময়ঃ
উত্তরাঞ্চলে মধ্য-কার্তিক (নভেম্বর প্রথম সপ্তাহ), দক্ষিণাঞ্চলে অগ্রহায়ণ মাসের ২য় সপ্তাহ থেকে ৩য় সপ্তাহে (নভেম্বর মাসের মধ্য থেকে শেষ সপ্তাহ) চাষাবাদ করার উপযুক্ত সময়৷
জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধানঃ
আলু নিতান্তই শীতপ্রধান ফসল৷ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও আলু ভালো জন্মে৷ তবে অ-নিরক্ষীয় অঞ্চলের শীতকালীন মৌসুমে যেমন আমাদের দেশে আলুর চাষ করা চলে৷ ১৭-২২ ডিগ্রি তাপমাত্রা আলুর জন্য আদর্শ তাপমাত্রা।
মৌসুমে মাঝারি বৃষ্টিপাত ৩২ ইঞ্চি অর্থাৎ ৭৬৪ মিলিমিটার আলুর জন্য উপযোগী৷ অধিক বৃষ্টিপাতে আলু মোটেই ভালো হয় না; গাছের বৃদ্ধি থেমে যায়৷ রোগ ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ সহজতর হয়৷ তবে পার্বত্য এলাকায় (১৮৬৫-২১৭৫ মিলিমিটার) অধিক বৃষ্টিপাত হলেও পানি দ্রুত সরে যায় ও ঠাণ্ডা পরিবেশ বিরাজমান থাকে বলে সেরূপ পরিবেশে আলুর চাষ করা যায়৷ তাই পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় এইরূপ পরিবেশে গ্রীষ্মকালে আলু জন্মানো যায়৷
বিভিন্ন ধরনের মাটির বৈশিষ্ট্যঃ
দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটি আলুর জন্য সব চাইতে ভালো এবং উপযোগি৷ এটেল-দোআঁশ মাটিতে আলুর চাষ করা যায়, কিন্ত সে রকম মাটিতে আলু খুব প্রজনন ঘটেনা ৷ আলুর মাটি বায়ু সুনিষ্কাশনযুক্ত, গভীর চাষ ও কিছুটা অম্লাত্মক হতে হবে৷ PH ৬.৬-৬৫ এর মধ্য হলে খুব ভালো ফলন হয়। এতে আলুর জন্য ক্ষতিকর কোন রোগ বা স্কেভিস হওয়ার সম্ভাবনা না থাকার কথা৷
আলু চাষের জমি তৈরিঃ
বীজ সংষোধিত বা উপর্যোক্ত হলে আগে আর কোনো রকম ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না৷ অন্যথায় বীজ বপনের পুর্বে বীজ শোধন করে নেওয়া ভালো৷ বীজ শোধনের জন্য মারকিউরিক ক্লোরাইড (Mercuric chloride), ফার্মালডিহাইড (Formaldehyde) অথবা, ইয়েলো অক্সাইড অব মার্কারি (Yellow oxide of mercury) ব্যবহার করা যায়৷ উক্ত তরল গুলো পানিতে দিয়ে আলুর বীজকে 5-8 মিনিট ডুবিয়ে রেখে উঠিয়ে নিলেই বীজ শোধন করা যায়। বীজ কাটার সময় ধারালো ছুড়ি দিয়ে লম্বালম্বি কাটতে হবে যাতে আলুর অঙকুরের চোখ নষ্ট না হয়।
আরো পড়ুন,
বীজের কাটানো অংশোটুকু পরিষ্কার ঠাণ্ডা ছাই লাগিয়ে দিতে হবে৷ এই সব সমস্ত সাবধানতা অবলম্বন করলে বীজ পচে নষ্ট হওয়ার একইবারে সম্ভাবনা কম থাকে বল্লেয় চলে৷
আলু চাষে কীটনাশকঃ
বপনের জন্য আলুর টিউবার অর্থাৎ কন্দ ব্যবহার করা হয়৷ আলু বীজ সারিতে বপন করতে হয়৷ এক সারি হতে অন্য সারির দূরত্ব ৬০ অথবা ৭০ সেন্টিমিটার হলে ভালো হয়, এবং সারিতে এক বীজ হতে অন্য বীজের দূরত্ব হবে ২৫-৩৫ সেন্টিমিটার৷ বীজ আস্ত বপন করাই ভালো, তবে আকারে বেশি বড় হলে কেটে দুইভাগ করে লাগান যায়৷ যে বীজের ব্যাস ২ হতে ৩ সেন্টিমিটার সেই বীজই বপনের জন্য উত্তম এবং সেসব বপন বপন করার সময় কাটার প্রয়োজন হয় না৷
আলুর গাছ ঝিমুনি ধরে, এবং আলু পচে গেলে কি করবেন :
আলুর গাছের ঝুমুরি রোগ আসলে, সেই আলুর গাছ সাথে সাথে তুলে ফেলে দিতে হবে। সাধারণত জমিকে শুষ্ক রাখতে হবে, যেইবার আলু চাষ করবেন, বিপরীতে তার পরবর্তী বার, ওই জমিতে আর আলু চাষ করবেন না । সেক্ষেত্রে তৃতীয় বছরে আলু চাষ করবেন, কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাবেন ইনশাল্লাহ।
আলুর গাছের পাতা কুঁকড়ে গেছে সে ক্ষেত্রে কি করবেঃ
আলুর গাছে কুড়ি ধরলে বা পাতায় কুড়ি ধরলে, সেই ক্ষেত্রে মলোডিয়ার ডুও এবং ডায়াথেন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে ৭ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
আলুর গাছ মরে যাচ্ছে, কি করবেনঃ
আক্রান্ত আলুর গাছ তুলে ফেলতে হবে, এবং সে ক্ষেত্রে রোভারাল ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম মিশিয়ে, স্প্রে করবেন।
আলুর গাছের কান্ড পচে গেলে, সে ক্ষেত্রে কি করবেনঃ
আলুর গাছের কান্ড পৌঁছে গেলে, সে ক্ষেত্রে যা করনীয়। প্রথমত আক্রান্ত গাছটিকে তুলে ফেলতে হবে। তারপরে জমিকে গভীরভাবে চাষ করতে হবে। এবং জমিতে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। এসব করণীর ফলে গাছের কান্ড পাচার রোগ কিছুটা হলেও দমন হয়ে থাকে।
- আলুর কাছে পাতা ফোটা গোল্ড বর্ণের দাগ, এবং গাছ খাটো হয়ে গেলে, সে ক্ষেত্রে করণীয় কিঃ
- এক্ষেত্রে, ডেসিস ২০ মিলি ২০ লিটার পানিতে মিশি স্প্রে করতে হবে । সেক্ষেত্রে অনেকটা সুফল পাওয়া যায় ।
- আলুর গাছ অত্যন্ত দুর্বল, বেড়ে উঠছে না করনীয় কি ঃ
- আলুর গাছে, প্লানোফিক্স ১ লিটার পানিতে ৩ গ্রাম মিশিয়ে ৭ দিন পর, পর স্প্রে করতে হবে । এবং মিলোডিয়ার ডুও ডায়াথেন ৭ দিন পর, পর স্প্রে করতে হবে ।
আলুর গাছের সবুজ পাতা সাদা হয়ে গেলে, কি করবেনঃ
এক্ষেত্রে, ভয়ের কোন কারণ নেই, এটি শীতের জন্য হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে, রোভারল ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম মিশিয়ে সাত দিন পর,পর স্প্রে করবেন।
আলু পাতা পুড়ে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে কি করবেনঃ
আলুর গাছের পাতা পুড়ে গেলে, এক্ষেত্রে মিলোডিও ২ গ্রাম, ডায়াথিন এম ৪৫ , প্রতি ২ গ্রাম, প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে, সাত দিন পর,পর স্প্রে করতে হবে। আলুতে মোড়ক রোগ দেখা দিলে, জমিতে পানি সেচ দেওয়া, বন্ধ করে দিতে হবে।
আলুর গাছের গোঁড়া কেটে দিলে, কি করবেনঃ
আলুর গাছের গোড়া কেটে দিলে, এই ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হচ্ছে যা, ফুরাডান জাতীয় কীটনাশক, বিঘা প্রতি পাঁচ থেকে ছয় কেজি হারে ছিটিয়ে দিতে হবে।
আলুর গাছের সিকড় নষ্ট হয়ে গেলে, কি করবেনঃ
আলুর গাছের শিকড় নষ্ট হয়ে গেলে, যা করণীয় মিলোডিও ডু এবং ডায়াথেন ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সাত দিন পর পর স্প্রে করতে হবে। এবং আলুর মোড়ক রোগ দেখা দিলে পানি সেচ দোয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
আলুর ডোগাকাটা রোগে কি করবেনঃ
আলুর ডগা কাটা রোগের ক্ষেত্রে, ফুরাডান ৫জি বিঘা প্রতি, ৫ থেকে ৬ কেজি প্রয়োগ করতে হবে।
আলুর গাছের শিকড় পচে যাচ্ছে, কি করবেনঃ
আলুর গাছের শিকড় পচে গেলে সেক্ষেত্রে, রোভারল ১০ মিলি ২০ লিটার পানিতে ৭ থেকে ১০ দিন পর,পর মিশিয়ে স্প্র করতে হবে। এবং আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে।
আলুর গাছের সবুজ পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে, করণীয় কিঃ
আলুর গাছের সবুজ পাতা হলুদ হয়ে গেলে, এক্ষেত্রে মেলোডিয়ার এবং ডায়াথিন ২ মিলি প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে সাত দিন, পর পর স্প্রে করতে হবে । এবং আক্রান্ত পাতা বা গাছ উপড়ে ফেলতে হবে। সে ক্ষেত্রে অনেকটাই সুফল পাওয়া যায়।
আলুর বীজ বপনের পর গাছ গজানোর সময় বিজের পচন ধরলে, কি করবেনঃ
আলুর জমিতে বীজ বপনের পর যদি বীজ পচন ধরে, তাহলে অবশ্যই বীজের অংকুর হওয়ার পরপর মিলোডিয়ার ডু এবং ডায়াথেন এম ও ৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম করে স্প্রে করতে হবে। ধন্যবাদ সবাইকে সাইটটি ভিজিট করার জন্য।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url