টবে গোলাপ ফুলের চাষ পদ্ধতি | গোলাপ গাছের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয়।
আসসালামুয়ালিকুম আজকে আমরা গোলাপ ফুল সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। কিভাবে গোলাপ ফুল চাষ করতে হয় এবং কিভাবে গোলাপ ফুলের গুটি বা কল ম তৈরি করতে হয় কোন সময় করতে হয় কতটুকু পরিচর্যা করলে গোলাপের বংশ বৃদ্ধি বিস্তার করা যায় সে সম্পর্কে আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জানবো।
সম্মানিত পাঠক আজকে আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনারা গোলাপ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ একটি ধারনা পেয়ে যাবেন সেজন্য আপনারা অবশ্যই আমার পোস্টটিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।
পোষ্ট সুচিপত্রঃ
- লাল গোলাপ ফুলের জাতের নাম
- গোলাপ ফুল কখন ফোটে
- গোলাপ গাছের মাটি তৈরি
- গোলাপ গাছের সার
- গোলাপ গাছের পরিচর্যা
গোলাপের পরিচিতিঃ
সৌন্দর্য ও লাবণ্যের প্রতীক গুলাপ এটি একটি শীতকালীন মৌসুমী ফুল। তবে বর্তমানে গোলাপ সারা বছর ধরে চাষ করা হয়। বর্ণ গন্ধ ও কমনীয়তা ও সৌন্দর্যের বিচারে গোলাপকে ফুলের রানী বলা হয় প্রেমীদের সবচেয়ে প্রিয় ফুল গোলাপ।
এটি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জলবাহিত খুব সহজে মানিয়ে নিতে পারে বলে পৃথিবীর সব দেশেই সারা বছর কম বেশি গোলাপের চাষ হয়। গোলাপ সাধারণত কাঠ ফ্লাওয়ার হিসেবে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।
আরো পড়ুন,
এছাড়াও সামাজিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, বাগান, লন, কেয়ারী, বারান্দা সাজাতে গোলাপের জুড়ি নাই। আতর ও সুগন্ধি শিল্পী ও গোলাপের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
গোলাপ চাষে জলবায়ু ও মাটির বিবরণ।
গোলাপ সিট ও নাতি শীতোষ্ণ মন্ডল এর ফুল অধিক উষ্ণ ও আর্দ্রতায় গোলাপ ভালো হয় না। ২২ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রা ৮৫% আপেক্ষিক আদ্রতা এবং ১০০ থেকে ১২৫ সেন্টিমিটার গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত গোলাপ চাষের জন্য উপযোগী। গোলাপ চাষের জন্য ৬.০-৬.৫ pH মান যুক্ত শুনিসকাসিত এবং উর্বর দোয়া আশ মাটি উত্তম। গোলাপ ফুলের গুণগত মান সূর্যালোকের উপস্থিতির উপর অনেকাংশ নির্ভর করে এক্ষেত্রে বিকাল অপেক্ষা সকালের রোদ বেশি কার্যকর হয়ে থাকে।
লাল গোলাপ ফুলের জাতের নাম।
পৃথিবীতে অনেক জাতের গোলাপ ফুল পাওয়া যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশের চাষ হয় এমন কতগুলো গোলাপের জাত আছে নিচে তুলে ধরা হলো:
- মিরান্ডি পাপা মেলান্ড
- ডাবল ডি লাইট
- তাজমহল
- প্যারাডাইশ
- মন্টে জুমা
- টাটা সেন্টার
- সিটি অফ বেল ফাস্ট ইত্যাদি।
গোলাপ ফুল কখন ফোটে।
বাংলাদেশের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত গোলাপের চারা রোপনের উপযুক্ত সময় বলে ধরা হয়ে থাকে। এই সময়টাতে গোলাপের চারা রোপন করলে গাছটির তাজা এবং সতেজ থাকে কেননা এটি একটি শীতকালীন সময়ের ফুল। তাই বলা যেতে পারে এ সময়টাতে গোলাপ চাষের জন্য উপযুক্ত সময়।
গোলাপের বংশবৃদ্ধি করন।
গোলাপ সাধারণত বীজ, কাটিং, গুটি কলম এবং চোখ কলমের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে থাকে। বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার শুধুমাত্র প্রজনন বা ফসল উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যবহৃত হয়। নতুন গাছ উৎপন্নের প্রধান পদ্ধতি বাডিং বা চোখ কলম, যার মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবেই কাটা ফুলের উৎপাদন করা হয়ে থাকে। যে জাতটির বংশবৃদ্ধি করা হয় তার চোখ অপর একটি সুবিধা মত আদি জোড় এর উপর স্থাপন করা হয়ে থাকে।
আদি জোড় গাছের সজীবতা, উৎপাদনশীলতা, ফুলের গুণাবলী, ঝোপের স্থায়িত্ব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মাটি ও আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আদি জোড়ের কাটিং সমূহ যেমন পেন্সিল আকৃতি গ্রিস্মের শেষে তৈরি করা হয়ে থাকে এবং নার্সারিতে শারি করে ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্বের রোপন করা হয়। প্রায় ছয় মাস পর ওইসব কাটিং সমূহ বাডিং এর জন্য উপযুক্ত আকৃতির কান্ড তৈরি করে থাকে।
টবে গোলাপ চাষের প্রয়োজনীয়তা।
খোলা মেলা আলো বাতাস পূর্ণ এমন স্থানে টপ রাখতে হবে যাতে সকালের সূর্যকিরণ পাই এবং অন্তত ৬ থেকে ৮ ঘন্টা রোধ পায়। বিকেলের রোদ বিশেষ করে গ্রীষ্মকাল না লাগানো ভালো, কেননা এতে ফুলের রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়। গোলাপ গাছটিতে যাতে চারদিক হইতে আলো পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে, তা না হলে গাছটির কেবল আলোর দিক দিয়েই বাড়বে।
এইজন্য টপ সহ গাছটি মাঝে মাঝে ঘুরিয়ে নিতে হবে। গ্রীস্মের প্রখর রোদ থেকে টবের গোলাপ গাছকে রক্ষা করার জন্য পর্যায়ক্রমে রোদ ওছায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টব রাখলে গাছ ভালো থাকবে। এবং ফুলও বেশি দিন ধরে পাওয়া যাবে।
গোলাপ গাছের মাটি তৈরি।
গোলাপ চাষের জন্য এটেল মাটি ভালো নয় তবে টবের জন্য স্যার মাটি এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে মাটি বেশ ফাঁপা থাকে এবং পানি না দাঁড়ায়। এক ভাগ দোয়া মাটি তিন ভাগ গোবর সার বা কম্পোস্ট, এক ভাগ পচা পাতা স্যার, আধা ভাগ বালি যেমন নদীর সাদা বালি হলে ভালো হয় তা দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে তাতে এক মুঠো সরিসার কোয়েল ও এক চামচ চুল মিশিয়ে ১ টি ২০ সেন্টিমিটার অর্থাৎ ৮ ইঞ্চি তবে একমাস রেখে দিতে হবে।
এই এক মাস তবে পানি দিয়ে মাটি উলটপালট করে দিতে হয়। এতে মাটির মিশ্রণ ভালো হবে। অনেকে মাটির মিশ্রনের ব্যবহৃত চা পাতা ব্যবহার করে ভালো ফল পেয়েছেন। টবের নিচে কয়েক সেন্টিমিটার পরিমাণ অংশে ইট বা মাটি হাঁড়ি পাতিলের ভাঙ্গা টুকরো এমনভাবে বিছিয়ে দিতে হবে যাতে টবের মাটি গুলোর উপর থাকে এতে বাড়তি পানি নিকাশের সুবিধা হবে।
টবের আকার নির্ধারণ।
গোলাপ চাষের জন্য টবের আকার নির্ভর করে যে গোলাপ চাষ করা হবে তা জাতির উপর। ছোট জাতের জন্য ২০ সেন্টিমিটার অর্থাৎ ৮ ইঞ্চি টা ভালো হবে এবং বড় জাতের জন্য 30 সেন্টিমিটার অর্থাৎ ১২ ইঞ্চি বা আরো ভোল্ট অফ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে প্রথম বছর যে আকারের টপ গাছ বসানো হবে পরের বছর বড় আকারে টপ গাছ স্থানান্তর করলে বড় আকারে বেশি ফুল পাওয়া যাবে।
গোলাপ ফুলের গাছ টবে বসানোর সময় নির্ধারণ।
তবে যারা বসানোর সময় বছরে যেকোনো সময় তবে গোলাপের চারা বসানো। তবে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর ও জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাস ছাড়া লাগানোর উত্তম সময় বলে বিবেচিত করা হয়। এ সময় চারা লাগালে বেশি দিন ধরে ফুল পাওয়া যায় এবং গাছের পরিচর্য করতে বেশ। এবং রোগ প্রকার ও আক্রমণ কম থাকে
গোলাপের চারা সংগ্রহ।
গোলাপের চারা সংগ্রহের সুন্দর যারা সংগ্রহ করা উচিত। যারা সংগ্রহের সময় এর গোড়ার মাটি গোলাটি অবিকল আছে কিনা তা ভালো করে দেখে নিতে হবে। মাটির গোলা সহ চারার গোড়া চিকর বেরিয়ে থাকা চারা গাছ না নেওয়াই ভালো। বিশ্বাস এবং পরিচিত নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করা উচিত। যারা সংগ্রহের ব্যাপারে অভিজ্ঞ লোকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
টবে চারা বসানো পদ্ধতি।
যারা গাছ বা কলম চারা মাটি সহ পলিথিন ব্যাগে অথবা ছোট মাটির টব বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। সারাটি যদি টবের হয় তাহলে টব থেকে পুরো মাটি সহ চারাটি এমনভাবে বের করতে হবে যাতে মাটির গোলাটি ভেঙে না যায় বা শিকড়ের কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভেজা মাটির গোলা সহ চারা সংগ্রহ করলে তা একটু শুকিয়ে নিতে হয়।
যারা বসাবার আগেই গাছের অপ্রয়োজনীয় পুরনো বা মরা ডাল পালা হালকাভাবে সেটে দিতে হবে এরপর চারটি টবের মাঝখানে সোজা করে বসিয়ে টবের উপরে কিছুটা কম্পোস্ট সার এ গাছের গোড়ার মাটি হালকা চাপ দিয়ে বসে দিতে হবে। চারা গাছ এমনভাবে বসাতে হবে যাতে সি করবে এর হবার গ্রিট পূর্বটি মাটির উপরে থাকে।
গোলাপ গাছে সেচ পদ্ধতি।
তবে বসানোর পর অন্তত দুই থেকে তিনবার পানির সেচ দিতে হবে এবং যারা অবস্থায় গাছ যাতে প্রখর রোদে ভাবির সাথে ঝাপটা থেকে রক্ষা পয়সা দিয়ে খেয়াল রাখতে হবে। প্রথম অবস্থায় তিন থেকে চার ঘন্টা এবং ধীরে ধীরে বাড়াতে বাড়াতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা রোদ পাওয়ার ব্যবস্থা করলে গোলাপ ভালো হবে।
পানি সেচের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় পানি দাঁড়িয়ে না যায় বা জমানার থাকে। কচি পাতা ও কুকড়ি ছাড়ার সময় একটু বেশি পানি দরকার এ সময়ে সকাল-সন্ধ্যা সেচ দেওয়া উচিত। ঝাজড়ি দিয়ে ডালপালা সহ সমস্ত গাছটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।
গোলাপ গাছের সার।
টবে গাছ বসানোর পর গাছটি লেগে গেলে এক মাস পর থেকে 15 দিন বা ১ মাস পর থেকে ছাড় দিতে হবে। শীতের ঠিক পরে অর্থাৎ মার্চের শেষে বা এপ্রিলের প্রথম দিকে টবের উপরে ৮ থেকে ১০ এর সেন্টিমিটার মাটির স্তর তুলে দিয়ে খালি জায়গায় পচা গোবর সার ও নতুন ফাঁপা মাটি দিয়ে ভরে দিতে হবে। এরপর খড় বা পাতা দিয়ে ঢেকে গ্রীষ্মের প্রখর রোধ থেকে গাছের শিকড়কে রক্ষা করতে হবে ।
শীতকালে গাছ ছাটার পর প্রতি ট্যাবে তিনমুঠা গুড়া গোবর সার ও এক মুঠা ইস্টিমিড হারের গোড়া বা স্থির আমিল প্রয়োগ করতে হবে। এরপর পুরো শীতকাল ধরে একমাস এক মুঠা করে স্টিম মোড বোন মিল বা স্টোরমিল প্রয়োগ করতে হবে। গোলাপের ভালো ফুল উৎপাদনের জন্য পাতার স্যার ও ফলিয়ার স্প্রে জনপ্রিয় তক্রমজ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েকটি রাসায়নিক সারমিচে এসআর প্রস্তুত করতে হয় যা শীতকালে রুদ্র দিনে সকাল ৮ তার মধ্যে হলিউড স্প্রে করতে হয়।
দুই প্রকারের পাতা স্যার গাছে ব্যবহার করা হয় প্রথমত গাছের স্বাস্থ্য ও ফুল ভালো করার জন্য অপরটি টেস এলিমেন্ট এর যোগান দেওয়ার জন্য যেমন ইউরিয়া ডাই অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ডাইপোটাসিয়াম ফসফেট প্রতিটি ১০ গ্রাম করে দশ লিটার পানিতে গুলে স্প্রে করতে হবে। ট্রেস এলিমেন্ট এর জন্য ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ২০ গ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ সালফেট ১৫ গ্রাম, ফেরাস সালফেট ১০ গ্রাম, বোরাক্স ৫ গ্রাম হারে মিসে প্রতি লিটার পানিতে উল্লেখিত মিশ্রনটির দুই গ্রাম করে গুলিয়ে স্প্রে করতে হবে।
দুটি পাতা স্যারের সাথে কীটনাশক বা বালায় নাশক মিশিয়ে স্ত্রী করা যায় কিন্তু দুটি স্যার একসাথে মিশিয়ে স্প্রে করা যাবে না। পাতার সার টবের গোলাপের জন্য অপরিহার্য এবং জমির গোলাপের জন্য উপকারী। স্প্রে করার সময় যেন পাতার দুদিকেই ভালোভাবে লাগে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। টবের গাছের চারা সারা বছর তরল সার প্রয়োগ করতে হবে। সঠিক মাত্রা বা প্রয়োগ বিধি না জেনে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করাই ভালো। কেননা মাত্রাই বা ব্যবহার বিধিতে একটু ব্যতিক্রম হলে গাছের ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়।
রাসায়নিক তরল স্যারের পরিবর্তেতে গোবর ও সর্ষের খৈল চাঁদ থেকে পাঁচ দিন পানিতে পোচিয়ে তরল করে সপ্তাহে দুই দিন করে ব্যবহার করা যায়। গাছের নতুন ডালপালা পাড়াতেও ফুলের আকার বড় করতে এ ধরনের তরল স্যার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তরল স্যারের অভাবে ছোট মাছ পচা পানি গাছের গোড়ায় দেওয়া যেতে পারে। দুর্বল গাছের প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম হিসাবে ইউরিয়া মিশিয়ে সকাল বিকাল পাতায় স্প্রে করলে গাছ তাজা অসুস্থ থাকে।
চুন ও পানি প্রয়োগ বিধিমালা।
প্রতি লিটার পানিতে এক চামচ গুঁড়ো চুল পরিষ্কার পানিতে ভালো করে শুলে পাতলা ন্যাকড়া থেকে প্রতি তিন মাস পর পর দিতে হয়। চুন ও পানি দেবার ১৫ দিন এর মধ্যে অন্য কোন ছাড় না দেওয়ায় ভালো তবে শুধু পানি দিতে হবে।
গোলাপ গাছের পরিচর্যা।
মৃত ও রোগগ্রস্ত ডাল অপসারনের জন্য গাছের উপযুক্ত আকৃতি প্রদানের জন্য প্রতিটি ডালের ফুল আসার জন্য এবং প্রয়োজনীয় রৌদ্র পাবার জন্য নিয়মিত গাছ ছাটাই প্রয়োজন হয়। গোলাপ প্রচুর শাখা বিস্তারকারী জাতীয় গাছ।
গাছের ফুল দেওয়া শেষ হলে গাছ সেটে দিতে হবে এবং নিয়মিত গাছ ছাড়াই করলে বেশি ও বড় আকারে ফুল পাওয়া যায়। বর্ষার পর অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস গাছ ছাটাই এর জন্য ভালো সময়। সাধারণত বীজ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার অর্থাৎ 8 থেকে 10 ইঞ্চি বড় রেখে ডাল সেঁটে দিতে হবে।
ডাল এমনভাবে কাটতে হবে যাতে থেঁতলে বা ছিড়ে না যায় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এইজন্য ধারালো ছুড়ি ব্যবহার করাই উত্তম। সাদা হলুদ হালকা হলুদ ও দৌড়োঙ্গা জাতের গোলাপী গাছ খুব হালকা ছোটরা আর লাল জাতের গোলাপ গাছ শক্ত ছড়া দিতে হয়।
গাছ ছাটা এর পর ডাইব্যাক রোগের আক্রমণ হতে পারে তাই গাছ ছাটায়ের আগে ও পরে কীটনাশক ও ছত্রাক নাশক দুই প্রকারের কীটনাশক প্রয়োগ করা দরকার।
রোগ প্রতিরোধ ও পোকা দমন পদ্ধতি।
শুয়োপোকা বা কনিষ্ঠকারী অন্য যেকোনো পোকা দেখা মাত্র ধরে মেরে ফেলা উচিত এবং লাল মাকড়সার আক্রমণ ও ড্রাইব্যাক রোগ বেশ মারাত্মক।
সেচের সময় তবে জল জমে জলাবদ্ধতাই সৃষ্টি করলে লোহার শিক দিয়ে টবের মাটি ছিদ্র করে পানি বের হবার পথ করে দিতে হবে।
এই কাজটি একটু সাবধানে করা দরকার যাতে সি করে কোনো ক্ষতি না হয়। পানি দেওয়ার আগের দিন প্রতিবারই টবের ধারে গাছের মাটি বেশি করে এবং মাঝখানে মাটি কম করে খুঁচিয়ে দিতে হয়।
গ্রীষ্মকালীন পরিচর্যা।
টপ ছাদে বা পাকাস্থানে রাখলে পুরো খড় পিছিয়ে তার ওপর ইট বা কাঠের টুকরা রেখে সেগুলোর উপর টপ রাখা উচিত। গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড তাপের সময় পানি না দিয়ে রাতের দিকে যখন তাপমাত্রা কমতে থাকে যেমন রাত আটটার পর ছাদের টবে তখন জল দেওয়াই ভালো। এ সময় পানির তাপমাত্রা ও আবহাওয়ার সঙ্গে মোটামুটি সামুদ্রিক শুন্য থাকে।
প্রদর্শনী ফুলের জন্য করণীয়।
প্রদর্শনীর জন্য বর্ষাকালে উন্নত জাতের গোলাপ গাছ নির্বাচন করে টবে রোপণ করতে হবে এবং নিয়মিত সেচ ও স্যার প্রয়োগের দ্বারা গাছটিকে এমন করে তুলতে হবে যেন গাছের প্রচুর সুন্দর পাতা জন্মায় ও প্রস্ফুটিত ফুল বেশ বড় আকারের হয়। প্রদর্শনীর সময় থেকে অন্তত আড়াই মাস আগে গাছটিকে বিবেচনা সহিত ছাঁটাই করা উচিত। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি গাছ ছাটাই করলে ফেব্রুয়ারি মাসে গাছে ফুল ফোটে।
মাঝে মাঝে কচি ডালগুলো এমনভাবে ছেঁটে দিতে হবে যেন গাছটি বেশ ঝপালো হয় এবং গাছের প্রতিটি শাখায় দুটো কুড়ি রেখে বাকি কুড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলে দিতে হবে। যাতে বড় ফুল ফোটে সেদিকে যত্ন রেখে পরিচর্যা কাজ করতে হয়।
যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগে কুড়িজন ভাই তাহলে কড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে। ফুলের উজ্জ্বল্য বাড়াতে হলে চার লিটার পানিতে ২৫ গ্রাম আয়রন সালফেট গুলি ফুলের উপর প্রয়োগ করতে হবে। প্রদর্শনী আরম্ভ হওয়ার অন্তত এক সপ্তাহ পূর্বে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এতে দুপুরের প্রখর রৌদ্রে ফুলের পাপড়ি নষ্ট হয় না।
গোলাপ চারা রোপন পদ্ধতি সমূহ।
সাধারণত গোলাপের চারা পলিথিনের ব্যাগে থাকে বলে চারা রোপনের সময় ব্যাক্তি ছিড়ে ফেলে দিতে হবে এবং গর্তের মধ্যে গাছটি এমনভাবে ঢুকাতে হবে যাতে চারাটির গোড়া আগে যতটুকু মাটির নিচে ছিল গর্তে লাগানোর পরও যেন ঠিক ততটুকু মাটি নিচে থাকে।
চারা গাছ গর্তের মধ্যে বসানোর পর কিছু পাতা গোবর ও ভীতির বালি মাটি ভালো করে সিএসসি করে চার পাশে ছিটিয়ে দিতে হয়। তারপর গাছের গোড়াই মাটি দিয়ে ভালো করে চেপে দিতে হবে এবং সাথে পানিও দিতে হবে। চারা লাগানোর পর প্রথম রোদ থেকে গাছকে রক্ষা করার জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করতে হয়। বেলে মাটির বেলায় ঘন ঘন আর এটেল মাটির বেলায় ভারি মাটির বেলায় দুই থেকে তিন দিন পর পর পানি দেওয়া দরকার হতে পারে।
তবে কোনক্রমেই যাতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গোলাপি করে যদি সত্যবাদী থাকে তাহলে গাছ লাগানোর আগে পানি দিয়ে ভিজিয়ে মাটি নরম করে নিতে হয় যাতে শিকড় ঠিক মতো বাড়তে পারে।
ফুল সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা।
শব্দ ব্যবহারের জন্য আধ ফোঁটা গোলাপ ফুলের কুঁড়ি কাটা উচিত। কিন্তু কয়েকদিন পর ব্যবহারের লক্ষ্যে গোলাপ ফুলের কুড়ি পর্যায়ে আসার পর কাটা উচিত কেননা কাটা ফলোয়ার হিসেবে ফুল লম্বা পুষ্প দন্ড কয়েকটি পাতা সহ ধারালো ছড়ি দিয়ে কাটতে হয়। ফুল কাটার কাজটি খুব সকালে অথবা শেষ বিকেলে করা উচিত।
ফুলদানিতে পানি ১০% চিনি ও 600 টিভি এম ৮ HQC এর দুর্নি ফুল রেখে আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করা সম্ভব। বাজারে চাহিদার উপর ফুলের প্যাকেজিং নির্ভরশীল। অনেক উৎপাদনকারী নিকটস্থ স্থানীয় বাজারে জন্য প্যাকেজিং ছাড়াই ফুলের আঁটি বা গোছা বাজারে সরবরাহ করে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আটিসমূহ খবরের কাগজ দ্বারা আবদ্ধ থাকে।
গোলাপের ফলন সমূহ।
গোলাপের ফলন প্রধানত আবহাওয়া জাতির উপর নির্ভরশীল। আদর্শ উৎপাদন পরিবেশের লম্বা কাণ্ড যুক্ত যার প্রতি বছর গাছ পতি প্রায় 15 থেকে ত্রিশটি ফুল উৎপাদন করে। গ্রীষ্মকালীন সময়ে বিশেষ করে যখন ফুলের মান এবং বাজার দর কমে যায় তখন কুড়ি ছাঁটাই করে গাছের দৈহিক গঠন বৃদ্ধি ঠিক রাখতে হয়।
শেষ কথাঃ গোলাপ সবার প্রিয় একটি ফুল সবাই কম বেশি ভালোবেসে থাকে। সম্মানিত পাঠক পরিশেষে বলা যায় যে গোলাপ চাষ করতে যেসব বিষয়গুলো উপলব্ধ করতে হয় তা উপরে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্যই আপনারা যদি আমার এই পোস্টটি পড়ে স্ত ভয় ঠউপকার হয়ে থাকেন বা গোলাপ চাষে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে আমাকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন ধন্যবাদ সবাইকে।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url