একজিমা হলে কি খাওয়া যাবে আর কি খাওয়া যাবে না বিস্তারিত।
একজিমা (Eczema) হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী চর্মরোগ, যা চুলকানি, লালচে দাগ, শুষ্কতা ও ত্বকের ফাটা তৈরি করতে পারে। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন পরিবেশগত প্রভাব, অ্যালার্জি, ইমিউন সিস্টেমের অতিসক্রিয়তা, বা খাদ্য সংবেদনশীলতা।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু নির্দিষ্ট খাবার একজিমার উপসর্গ বাড়াতে পারে, আবার কিছু খাবার উপসর্গ কমাতেও সাহায্য করে। তাই একজিমা রোগীদের জানা উচিত কোন খাবার খাওয়া যাবে না এবং কোন খাবার গ্রহণ করলে উপকার হবে।
এই প্রবন্ধে আমরা ১০০০ শব্দের মধ্যে একজিমা হলে কী খাওয়া যাবে না, কী খাওয়া উচিত, এবং খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে কীভাবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
একজিমা ও খাদ্যের সম্পর্ক
একজিমা রোগীদের অনেক সময় কিছু নির্দিষ্ট খাবার খেলে উপসর্গ বেড়ে যায়। বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জিক একজিমা (Atopic Dermatitis) আছে, তাদের খাবার তালিকার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত।
যদিও সব ধরনের একজিমার ক্ষেত্রে খাবারের ভূমিকা সমান নয়, তবুও অনেক ক্ষেত্রে কিছু খাবার পরিহার করা একজিমার লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে।
একজিমা হলে কী খাওয়া যাবে না?
নিচে এমন কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যা একজিমার উপসর্গ বাড়াতে পারে এবং পরিহার করা উচিত:
দুগ্ধজাত খাবার (Dairy Products)
গরুর দুধ এবং এর তৈরি খাবার (যেমন দই, পনির, মাখন) অনেকের জন্য একজিমার প্রধান ট্রিগার হতে পারে।
কেন ক্ষতিকর?
- দুধের মধ্যে থাকা ক্যাসেইন (Casein) এবং ল্যাকটোজ (Lactose) অনেকের শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যা একজিমার উপসর্গ বাড়ায়।
- এটি ইমিউন সিস্টেমকে অতিরিক্ত সক্রিয় করে তোলে এবং ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
পরিবর্তে কী খাওয়া যেতে পারে?
- নারকেল দুধ, ওট মিল্ক, বা বাদামের দুধ (যদি বাদামে সমস্যা না থাকে)।
গ্লুটেনযুক্ত খাবার (Gluten-rich Foods)
গ্লুটেন এক ধরনের প্রোটিন, যা গম, যব ও রাইয়ের মতো শস্যে পাওয়া যায়।
কেন ক্ষতিকর?
- এটি অন্ত্রের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যা ত্বকে প্রদাহ বাড়ায়।
- গ্লুটেন সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য এটি একজিমার উপসর্গকে আরও খারাপ করতে পারে।
পরিবর্তে কী খাওয়া যেতে পারে?
- গ্লুটেনমুক্ত শস্য যেমন চাল, ওটস (গ্লুটেনমুক্ত), বা বাজরা।
চিনি ও উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার (Sugar & High Carbohydrates)
কেন ক্ষতিকর?
- অতিরিক্ত চিনি রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায়, যা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
- এটি ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে এবং একজিমার উপসর্গ বাড়িয়ে দিতে পারে।
যে খাবারগুলো এড়ানো উচিত:
- সফট ড্রিংকস, চকলেট, মিষ্টি, আইসক্রিম, কেক, এবং প্যাকেটজাত চিপস।
পরিবর্তে কী খাওয়া যেতে পারে?
- প্রাকৃতিক মিষ্টি (যেমন খেজুর, মৌসুমী ফল, মধু) পরিমাণমতো খাওয়া যেতে পারে।
সয়া ও সয়াজাতীয় খাবার (Soy & Soy Products)
সয়া দুধ, সয়া সস, টফু এবং সয়া প্রোটিন অনেকের শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
কেন ক্ষতিকর?
- এটি শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং একজিমার লক্ষণ বাড়াতে পারে।
- সয়া প্রোটিন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা ত্বকের সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।
পরিবর্তে কী খাওয়া যেতে পারে?
- নারকেল দুধ বা ওট মিল্ক।
প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ফাস্ট ফুড (Processed & Fast Foods)
প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে অতিরিক্ত লবণ, চিনি, সংরক্ষণকারী পদার্থ ও কৃত্রিম রঙ থাকে, যা একজিমার জন্য ক্ষতিকর।
যে খাবারগুলো এড়ানো উচিত:
- প্যাকেটজাত নুডলস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বার্গার, প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন সসেজ, সালামি)।
পরিবর্তে কী খাওয়া যেতে পারে?
- বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার, যেমন সবজি ও শাকসবজি ভিত্তিক খাবার।
বাদাম ও সামুদ্রিক খাবার (Nuts & Seafood)
অনেকের জন্য বাদাম ও সামুদ্রিক খাবার একজিমার প্রধান ট্রিগার হতে পারে।
কেন ক্ষতিকর?
- এটি শরীরে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যা একজিমার উপসর্গ বাড়িয়ে দেয়।
যে খাবারগুলো এড়ানো উচিত:
- চিংড়ি, কাঁকড়া, স্যামন মাছ, কাজুবাদাম, আখরোট।
পরিবর্তে কী খাওয়া যেতে পারে?
- চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড (যদি অ্যালার্জি না থাকে)।
ডিম (Eggs)
অনেক একজিমা রোগীর ক্ষেত্রে ডিম খেলে উপসর্গ বাড়তে পারে।
কেন ক্ষতিকর?
- ডিমের প্রোটিন (Ovalbumin) কিছু মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে উত্তেজিত করতে পারে, যা একজিমার উপসর্গ বাড়ায়।
পরিবর্তে কী খাওয়া যেতে পারে?
- প্রোটিনের জন্য মসুর ডাল, চিকেন (যদি সমস্যা না হয়)।
একজিমা কমাতে সহায়ক খাবার
যেসব খাবার একজিমা কমাতে সাহায্য করে:
✅ শাকসবজি (ব্রকলি, পালং শাক)
✅ ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার (মাছের তেল, ফ্ল্যাক্স সিড)
✅ হলুদ ও আদা (প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি)
✅ প্রচুর পানি
✅ ফাইবারযুক্ত খাবার (সবুজ শাকসবজি, ফল)
একজিমা হলে কিছু খাবার পরিহার করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। দুগ্ধজাত খাবার, গ্লুটেন, চিনি, সয়া, ফাস্ট ফুড, বাদাম, ডিম ও সামুদ্রিক খাবার অনেকের ক্ষেত্রে একজিমার উপসর্গ বাড়াতে পারে।
তবে একজিমার প্রতিক্রিয়া ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে, তাই ধীরে ধীরে কিছু খাবার বাদ দিয়ে পরীক্ষা করা উচিত কোনটি আপনার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। একজিমার লক্ষণ কমাতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, প্রচুর পানি পান, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গুরুত্বপূর্ণ। যদি একজিমা গুরুতর হয়, তবে অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url