ভিডিও না বানিয়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম করার উপায়

ইউটিউব একটি ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম, যা শুধুমাত্র ভিডিও নির্মাতাদের জন্য নয়, তাদের জন্যও লাভজনক হতে পারে যারা ভিডিও তৈরি না করেও ইউটিউব থেকে আয় করতে চান। অনেকেই মনে করেন ইউটিউব থেকে আয় করতে হলে তাদের ভিডিও তৈরি করতে হবে, তবে বাস্তবে এমন কিছু উপায় আছে যার মাধ্যমে আপনি ইউটিউব থেকে আয় করতে পারেন, ভিডিও না বানিয়েও। 
ভিডিও না বানিয়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম করার উপায়ভিডিও না বানিয়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম করার গোপন টিপসইউটিউব থেকে আয় করার ১২ পদ্ধতি১ ভিউ কত টাকাইউটিউব চ্যানেলের ডেসক্রিপশন সর্বোচ্চ কত সংখ্যা দেওয়া যায়ইউটিউব শর্টস মনিটাইজেশন নিয়ম 2024ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়মইউটিউব মনিটাইজেশন পলিসি ২০২৪পুরাতন ইউটিউবইউটিউব ক্যাটাগরি

এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, কীভাবে আপনি ভিডিও তৈরি না করে ইউটিউব থেকে আয় করতে পারেন।

ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম (YouTube Partner Program)

ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম (YPP) এক জনপ্রিয় উপায় যার মাধ্যমে আপনি ভিডিও বানানো ছাড়াও ইউটিউব থেকে আয় করতে পারেন। এই প্রোগ্রামটি আপনাকে বিজ্ঞাপন প্রচার করার মাধ্যমে আয় করতে দেয়, এবং এটি এমন ভিডিওগুলির উপর কাজ করে যা অন্যরা তৈরি করেছে। উদাহরণস্বরূপ:
আপনি বিভিন্ন কনটেন্ট কিউরেট (curate) করতে পারেন এবং অন্যদের ভিডিও আপনার চ্যানেলে শেয়ার করতে পারেন। 

এতে আপনি তাদের ভিডিওগুলিতে বিজ্ঞাপন শো করে আয় করতে পারবেন। তবে, আপনাকে ভিডিও কনটেন্ট শেয়ার করার আগে ইউটিউবের কপিরাইট নীতি মেনে চলতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে, আপনার অনুমতি নিতে হতে পারে অথবা ক্রিয়েটরের লাইসেন্স থাকা প্রয়োজন।

এই পদ্ধতিটি একটি প্রাথমিক শর্ত পূর্ণ না করেও আয় করার উপায়, তবে আপনাকে ধৈর্য সহকারে কাজ করতে হবে এবং নিয়মিত কনটেন্ট শেয়ার করতে হবে।

প্লেলিস্ট তৈরি করে আয় করা (Earning from Playlists)

আপনি ইউটিউবে প্লেলিস্ট তৈরি করতে পারেন, যেখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের ভিডিও একত্রিত করবেন, যা আপনার দর্শকদের জন্য সহায়ক হতে পারে। আপনি যদি কোনও নির্দিষ্ট বিষয় বা সেগমেন্টের ভিডিওগুলো একত্রিত করেন, তবে আপনি সেই প্লেলিস্টটি জনপ্রিয় করতে পারেন।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি টিউটোরিয়াল ভিডিও, শিক্ষামূলক ভিডিও বা পণ্যের রিভিউ সম্পর্কিত ভিডিও একত্রিত করতে পারেন। যদি আপনার প্লেলিস্ট দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, তাহলে ইউটিউব বিজ্ঞাপন থেকে আয় শুরু হতে পারে।

আপনার কাজ কেবল ভিডিও নির্বাচন করা এবং প্লেলিস্ট তৈরি করা। সেই প্লেলিস্টে প্রদর্শিত ভিডিওগুলি দেখতে দর্শকরা আপনাকে বিজ্ঞাপন আয় এনে দিতে সহায়তা করবে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing)

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ইউটিউব থেকে আয় করার অন্যতম জনপ্রিয় উপায়। আপনি অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন এবং তার মাধ্যমে আয় করতে পারেন, তবে ভিডিও তৈরি না করেও। আপনি ইউটিউবের কমেন্ট সেকশন অথবা ভিডিও ডিসক্রিপশন-এ আপনার অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন।

যতবার দর্শক সেই লিঙ্কে ক্লিক করে পণ্য কিনবে, আপনি তার থেকে কমিশন পাবেন। উদাহরণস্বরূপ:
অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম: আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট পণ্যের ব্যাপারে জানেন, তবে তার অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক আপনার ইউটিউব চ্যানেলে শেয়ার করতে পারেন। দর্শকরা যদি আপনার লিঙ্কে ক্লিক করে সেই পণ্য কেনে, আপনি এর থেকে কিছু শতাংশ কমিশন পাবেন।

এটি এমন একটি কৌশল যেখানে আপনাকে ভিডিও তৈরি করতে হবে না, কিন্তু কেবলমাত্র অন্যান্য ভিডিও বা কনটেন্টের মাধ্যমে আপনি আয় করতে পারবেন। অনেক সফল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার নিজের ইউটিউব চ্যানেল দিয়ে অন্যান্য ভিডিওর মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক শেয়ার করে আয় করে।

ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন (Channel Monetization)

আপনি যদি একটি চ্যানেল তৈরি করেন এবং সেই চ্যানেলে অন্যদের ভিডিও শেয়ার করেন, তবে আপনিও চ্যানেল মনিটাইজ করতে পারবেন। তবে, এটি কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে আসে, কারণ চ্যানেল তৈরির সময় আপনাকে ভিডিও কনটেন্ট শেয়ার করার ক্ষেত্রে কপিরাইট নীতি অনুসরণ করতে হবে।

চ্যানেলটি মনিটাইজ করার পর, আপনি ভিডিও নির্মাতাদের কনটেন্ট থেকে বিজ্ঞাপন বা সুপার চ্যাট এর মাধ্যমে আয় করতে পারেন। তবে, এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করতে আপনাকে ভিডিও নির্মাতাদের অনুমতি প্রয়োজন হতে পারে।

লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে আয় করা (Earning from Live Streaming)

যদি আপনি লাইভ স্ট্রিমিং করতে পছন্দ করেন তবে ইউটিউবের লাইভ চ্যাট বা সুপারচ্যাট এর মাধ্যমে আয় করতে পারেন। লাইভ স্ট্রিমিংয়ের সময় দর্শকরা আপনাকে অর্থ প্রদান করতে পারে। এখানে, আপনাকে ভিডিও তৈরি করতে হবে না, তবে আপনি লাইভ আড্ডা দিতে পারেন বা কিউ&A সেশন করতে পারেন এবং দর্শকদের কাছ থেকে অর্থ পেতে পারেন।

এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি ভালো ফলোয়ার বেস তৈরি করতে হবে এবং একটি সাপোর্টিভ কমিউনিটি তৈরি করতে হবে। তবে, লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে আপনার আয় সীমাবদ্ধ নয়, কারণ অনেক দর্শক সুপারচ্যাট বা স্টিকার কিনতে আগ্রহী থাকেন।

ইউটিউব থেকে অনুদান সংগ্রহ (Crowdfunding)

ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেল বা কোনো বিশেষ প্রকল্পের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন। Patreon বা Kickstarter এর মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আপনি আপনার চ্যানেলের জন্য অনুদান সংগ্রহ করতে পারেন। ইউটিউবে আপনার দর্শকদের কাছে এই প্ল্যাটফর্মগুলো প্রচার করে অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব।

ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে, আপনি ভিডিও তৈরি না করেও ইউটিউব থেকে আয় করতে পারেন, কারণ দর্শকরা তাদের পছন্দের চ্যানেল বা কনটেন্ট নির্মাতাকে সমর্থন করতে চাইলে সরাসরি অর্থ প্রদান করতে পারে।

ভিডিও শেয়ারিং এবং কিউরেশন সাইট ব্যবহার (Using Video Curation Sites)

এছাড়া, আপনি ভিডিও কিউরেশন সাইট ব্যবহার করে ইউটিউব থেকে আয় করতে পারেন। ভিডিও কিউরেশন হলো অন্যের ভিডিও গুলো একত্রিত করা এবং এটি অন্যদের কাছে উপস্থাপন করা। এই ভিডিওগুলির জন্য আপনি কিছু পণ্য বা সার্ভিসের লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন এবং আয় করতে পারেন।

যেমন, আপনি ইউটিউব থেকে কোনও ভিডিও খুঁজে বের করে সেটা আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগে শেয়ার করে সেখানে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারেন। এতে আপনার আয় হবে ভিডিওতে থাকা বিজ্ঞাপন থেকে।

ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য ভিডিও তৈরি করার বাধ্যবাধকতা নেই। বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে আপনি ভিডিও শেয়ার, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, চ্যানেল মনিটাইজেশন, লাইভ স্ট্রিমিং, ক্রাউডফান্ডিং, এবং কিউরেশন সাইটের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে আয় করতে পারেন। আপনার সৃজনশীলতা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে আপনি এমন উপায় খুঁজে পেতে পারেন যা আপনাকে ভিডিও না বানিয়েও ইউটিউব থেকে আয় করার সুযোগ দেবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url